বালেশ্বরে মৃত্যু মিছিলের মাঝে কপাল জোড়ে প্রাণ ফিরে পাওয়ায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বাঁকুড়ার দুই বন্ধু। দু'জনেই মারাত্মক জখম অবস্থায় বালেশ্বরের সোরো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনার আকষ্মিকতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিদ্যুৎ ও সুজন। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাই যাচ্ছিলেন তাঁরা। দুর্ঘটনার সময় বিকট শব্দ ও চারিদিকের ধোঁয়া এখনও ভাসছে তাঁদের চোখের সামনে। দুজনের গলায় আতঙ্কের সুর।
বাঁকুড়ার পাঠজোড়ো গ্রামে বাড়ি বিদ্যুৎ পাল ও সুজন বাউড়ির। বালেশ্বরের সোরো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুই বন্ধু। বছর চব্বিশের বিদ্য়ুৎ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমরা খড়গপুর স্টেশন থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপেছি। ট্রেন বালেশ্বরে দাঁড়াল। তারপর বালেশ্বর স্টেশন থেকে ছাড়ার একটু পরেই বীভৎস শব্দ হল। আমারা এস ওয়ান কামরায় ছিলাম। তারপর কোচের মধ্যে সবাই এদিক-ওদিক ছিটকে গেলাম। চোখ খুলে দেখি হাসপাতালে। আমাদের গতকাল রাত সাড়ে দশটায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। এত জখম ব্যক্তি কীভাবে দ্রুত চিকিৎসা হবে? কাল রাতে একটা ব্যথা কমানোর ইনজেকশন দিয়েছিল। শনিবার সকাল ১০টা অবধি ডাক্তার দেখেনি। আমার ডান হাত ভেঙে গিয়েছে। ঘাড়ে, মাথায়, পা ও কান কেটে গিয়েছে। পায়ে সেলাই পড়েছে। এখনও চোখের সামনে ঘটনা দেখতে পাচ্ছি।'
আরও পড়ুন- করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা: কোলের সন্তানদের নিয়ে অথৈ জলে স্ত্রী, শোকে পাথর বাবা-মা
বিদ্যুৎ পাল ও সুজন বাউড়ি ছিলেন করমণ্ডলের এস ওয়ান স্লিপার ক্লাসের ৫ ও ৬ নম্বর সিটে। দুই বন্ধু উঠেছিলেন খড়গপুর থেকে। ঘটনার সময় তাঁরা ট্রেনের কামরায় বসেছিলেন। এরা দুজনই চেন্নাইতে চায়ের দোকানে কাজ করেন। সেই কাজ করতেই রওনা দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস, মৃত্যু-মিছিল, আজ যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী
বিদ্যুতের সঙ্গী ছিলেন ২১ বছরের সুজন বাউড়ি। সুজন বলেন, 'আমার পায়ে, কোমরে চোট লেগেছে। সারজীবন এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা মনে থাকবে। সেই বিকট শব্দ এখনও কানে বাজছে। ঘটনায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। চোখ খুলে দেখি হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে এসেছিল। বিকট শব্দ হয়েছিল। আমাদের সামনের বগি মারাত্মক ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। কপাল জোড়ে বেঁচে গিয়েছি। জানি না কবে বাড়ি ফিরব। চেন্নাইয়ে চায়ের দোকানে কাজ করে কিছু টাকা বাড়ির সংসার খরচের জন্য পাঠাই। বাকি টানা নিজের জন্য রাখি।'