অনেক ঘটা করে বছর দুই আগে দুর্গাপুজো শুরু করেছিল বঙ্গ বিজেপি। সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধনে ভার্চুয়ালি পৌরহিত্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখন তাঁর লম্বা দাঁড়ি, বেশভূষা নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। পুজো ঘিরে বাংলা দখলের স্বপ্নে তখন বুঁদ পদ্মনেতারা। বেশ জাঁকজমক করে পুজো করেও লাভ হয়নি। বছর ঘুরতেই বিধানসভায় ধরাশায়ী হয় বিজেপি। মা দুর্গার আশীর্বাদ পাননি গেরুয়া নেতারা। বছর দুই পরে সেই দুর্গাপুজোই একপ্রকার অনিশ্চিত।
২০২০ সালে যখন পুজো শুরু হয় সেইসময় ওই উদ্যোগের মূল পুরোধারাই এখন আর বিজেপিতে নেই। মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত এবং জয়প্রকাশ মজুমদাররা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে। বোধনের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনিও এখন তৃণমূলে এবং রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে গেছেন। এমনকী তখনকার রাজ্য পর্যবেক্ষক কেন্দ্রীয় সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কেও রাজ্যের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় এসেছেন গোবলয়ের নেতা সুনীল বনসল।
তাহলে এবার কি পুজো হবে না? একুশের নির্বাচনে ভরাডুবির পর নমো নমো করে পুজো করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। এবার তো তা-ও হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পুজোর আর বেশিদিন বাকি নেই। কিন্তু দুর্গাপুজো নিয়ে তেমন দৌড়ঝাপ দেখা যাচ্ছে কই! হিন্দু রীতি অনুযায়ী, কোনও ব্রত বা পুজো একবার পালন করলে পর পর তিনবার তা করতেই হয়। তা নাহলে অমঙ্গল হয়। কিন্তু ২০২০-তে ঘটা করে পুজোর পরেও দেবীর আশীর্বাদে বাংলা বিজয় হয়নি। মোদী-শাহ-নাড্ডারাও দুর্গাপুজো নিয়ে উৎসাহ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন পুজোয় রাজ্যের অনুদানের বিরোধিতা, হাইকোর্টে দায়ের তৃতীয় জনস্বার্থ মামলা
প্রথমবার পুজোর সময়ই তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছিলেন, পুজো করা রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। যা নিয়ে মুকুল-কৈলাসদের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে চলে আসে। পুজোর কোনও দায়িত্বই নেননি দিলীপ। পরের বারও তাঁকে দেখা যায়নি। এবার তো প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করে হাইকমান্ডের অসন্তোষে পড়েছেন দিলীপ।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত ভোট ২০২৩: দিলীপের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণী, আরও অস্বস্তি বাড়ল বিজেপির
এবার নয়া রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। প্রথমবার পুজোয় সংকল্প করা হয় তৎকালীন রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। এবার তো তিনি রাজ্য কমিটিতেই নেই। পুজোর ভবিষ্যত প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেছেন, "পুজো হবে। তবে তা নিয়ে দলে কোনও আলোচনা হয়নি। সাংস্কৃতিক সেলের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে সব ঠিক করা হবে।" এই সেলের মাথায় রয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। সম্প্রতি সেলের আহ্বায়ক হয়েছেন তিনি। রয়েছেন কাঞ্চনা মৈত্র, লামা হালদারের মতো তারকারা। পুজো নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের কতটা চাঙ্গা করতে পারে কালচারাল সেল সেটাই এখন দেখার।