ইউনেস্কো কলকাতার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই এই স্বীকৃতির কৃতিত্ব কার তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের শেষ নেই। আদতে এই বিরাট স্বীকৃতির নেপথ্যে অধ্যাপিকা তপতী গুহঠাকুরতার অবদান। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তাঁকে কৃতিত্ব না দিয়ে এই স্বীকৃতির ঝোল নিজের দিকে টানছেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় ওঠে। কিন্তু লক্ষ্মীবারে সব বিতর্কের অবসান করলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। তপতীকে শুধু ডাকেনই-নি, ইউনেস্কো প্রতিনিধিদের মতো তাঁকেও সম্মাননা জ্ঞাপন করলেন মমতা।
শেষ কয়েকদিন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে হয়েছে অজস্র লেখালেখি কিন্তু তিনি নিজে এ বিষয়ে একদমই মুখ খুলতে চাননি। এর কারণ কি কৃতিত্ব নেওয়ার বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখা? নাকি প্রথম থেকেই চুপচাপ এই কাজটা চালিয়ে যাওয়ার অভ্যাস? তা ঠিক পরিস্কার নয়। হয়তো শেষমেশ তিনি আলাদা করে নিজের নামে এর কোনওরকম কৃতিত্ব না নেওয়াটাই সিদ্ধান্ত হিসাবে বেছে নিয়েছেন?
অপরদিকে তাকালে প্রশ্ন ওঠে যে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারটা নিয়ে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে শহরজুড়ে যখন এক বিরাট কর্মযজ্ঞ আয়োজনের ডাক দিয়েছেন তখন তারমধ্যেও কোথাও প্রফেসর গুহঠাকুরতার নাম উঠে আসছে না কেন? তবে বৃহস্পতিবারই তাঁকে দেখা গেল রেড রোডে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন মঞ্চে তপতীদেবীকেও সংবর্ধনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন ‘ইউনেস্কোকে স্যালুট, আজ থেকেই পুজো শুরু’, রেড রোডের মঞ্চে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রফেসর তপতী গুহ ঠাকুরতা একটা বই প্রকাশ করেন, যার নাম “In the Name of the Goddess: The Durga Pujas of Contemporary Kolkata”। বইটি সম্পূর্ণ গবেষণাভিত্তিক একটা কাজ। বইয়ে লেখা ভূমিকা থেকে জানা যায়, ২০০২ থেকে তিনি তাঁর সহকর্মী এবং বন্ধু অঞ্জন ঘোষের সঙ্গে একটা জয়েন্ট প্রজেক্ট হিসাবে কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। এবং অবশেষে ২০১৫-তে এই বইটা প্রকাশ করতে পারেন। এই বইটাই ছিল ভিত্তিপ্রস্তরের মতো।
আরও পড়ুন পুজোর মঞ্চে দাদা-দিদি একসঙ্গে! কোন অঙ্কে দুজন পাশাপাশি, জল্পনা তুঙ্গে
তার পর ২০১৮ সালে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পাওয়ার লড়াই শুরু করেন তপতীদেবী। ডসিয়ার তৈরি করে কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে পাঠানো এবং পরে তা ইউনেস্কোর মনোনয়নের জন্য যায়। ২০২১ সালে শেষপর্যন্ত তপতীদেবীর লড়াই সার্থক হয়, এবং কলকাতার দুর্গাপুজো ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ সম্মান পায়। যাঁর কৃতিত্ব তাঁকে অবমাননা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। যখন এই নিয়ে আজ, ধন্যবাদ মিছিলের সময়ও বিতর্কের ঝড়, তখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা তপতীদেবীকে সংবর্ধনা দিয়ে কর্তব্য পালন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেকে আবার বলছেন, পাপস্খালন। তবে বিতর্কের শেষ হল এটা বলা যায়।