রাজ্যের দুয়ারে কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তবু যেন অনেকটাই গাছাড়া ভাব রাজনৈতিক মহলে। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পর জল মাপছে তৃণমূল কংগ্রেস। হাত শিবির যে শুধু একার কৃতিত্বে জয় পায়নি একথা নতুন করে বলার কিছু নেই। একইসঙ্গে শিক্ষাদফতরের নিয়োগে দুর্নীতি ও অনুব্রত মণ্ডল নিয়ে রোজই গরমাগরম ঘটনা বাংলার রাজনীতিকে উত্তাল করে দিচ্ছে। এদিকে বিরোধীরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে অনড়। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? বিরোধীদেরই অভিযোগ, প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৮-তে। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিরোধীদের জনভিত্তি নেই বলেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি করে থাকে। গত পঞ্চায়েত যে পুরোপুরি সুষ্ঠু ভাবে হয়নি তা স্বাকীরও করে তৃণমূল নেতৃত্ব।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহ আগের যে কোনও নির্বাচনের পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই পৃথক। প্রথমত দীর্ঘ দিন ধরে চলা শিক্ষা দফতরে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়ক, রাজ্য যুব নেতা, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জেলবন্দি। দিল্লির তিহার জেলে রয়েছেন গরু পাচারকান্ডে ধৃত অনুব্রত মন্ডল। এখনও পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য দুজনই তৃণমূলের বিধায়ক রয়েছেন। যুব নেতা কুন্তল বা শান্তনুর বিরুদ্ধেও দল কোনও কড়া ব্যবস্থা নেয়নি। অনুব্রত মন্ডলও বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি রয়েছেন। তৃণমূলের দাবি, এঁরা এখনও অভিযুক্ত। দোষী প্রমাণিত হয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, দল এঁদের বিরুদ্ধে যে কোনও কারণে ব্যবস্থা না নিলেও গলার কাঁটার মতো থেকে গেল।
আরও পড়ুন- কাটল জট? রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক শেষে কীসের ইঙ্গিত আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের?
পঞ্চায়েতের আগে সাগরদিঘির উপনির্বাচন যে বিরোধী বা শাসকদলের অ্যাসিড টেষ্ট ছিল তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই পর্যবেক্ষক মহলের। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপির ভোট কমে যাওয়া, বামেদের সমর্থনে বিপুল ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পাশাপাশি মুসলিম ভোটে থাবা বসানোতে কপালে হাত পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তাহলে কী সত্যি মুসলিম ভোট ব্যাংকে ধ্বস নামতে চলেছে? তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়েছে সব মহলেই। বিশেষ অনুসন্ধান করছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছুটা হলেও প্রমাদ গুনছে তৃণমূল, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- ‘চুরির চাকরি’ শেষমেশ গেলই! তৃণমূলের আরও এক বিধায়ক-পুত্র পথে বসলেন!
এরইমধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি করেছে বিজেপি, কংগ্রেস। যদিও বিজেপি গতবছর সেপ্টেম্বর থেকেই এই দাবি করে আসছে। ২০১১-এর তৃণমূলের জোটসঙ্গী কংগ্রেস রাজ্যপালের কাছে দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করার। সব থেকে বড় প্রশ্ন, উপনির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয়, দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগে চাকরি চলে যাওয়া যা বাংলায় কখনও ঘটেনি, এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটে কি সমানে সমানে টক্কর চলবে শাসক-বিরোধীরে মধ্যে? তবে গ্রাম বাংলায় ক্ষমতা দখলের বেপরোয়া লড়াই রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপরই ভরসা রাখছে বিরোধী দলগুলি।