Vandalism at RG Kar: আরজি কর কাণ্ডে উত্তাল গোটা দেশ। বিক্ষোভে ফুঁসছে শহর কলকাতা। তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দিকে দিকে জারি রয়েছে আন্দোলন-প্রতিবাদ। এর মাঝেই ১৪ আগস্ট রাতে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভাংচুরের ঘটনায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে গ্রেফতার হওয়া ৩০ জনের মধ্যে ২ জন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ।
হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদের মাঝে ১৪ অগাস্ট রাতে কার্যত তাণ্ডব চালানো হয় আরজি কর হাসপাতালে। এমারজেন্সি সহ ১৮ টি ওয়ার্ডে চালানো হয় ভাংচুর। ভেঙে ফেলা হয় ভেন্টিলেশন মেশিন, নষ্ট হয় লাখ লাখ টাকার জীবনদায়ী ওষুধ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কলকাতা পুলিশকে। ভাংচুরের ঘটনার পরই অভিযুক্ত ৭৬ জনের ছবি প্রকাশ করে কলকাতা পুলিশ। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই ঘটনায় ১৫ জনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে। জানা গিয়েছে অনেকেই সেই রাতে তাদের পরিবারকে জানায় যে তারা ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাঙচুরের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ঘটনায় অভিযুক্ত বেশিরভাগই হাসপাতালের পাঁচ কিলোমিটার মধ্যেকার বাসিন্দা।
আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে নাগেরবাজার থানা এলাকায় বাড়ি বছর ২৪-র সৌমিক দাসের। তিনি পেশায় একজন জিম ট্রেনার এবং স্থানীয় টিএমসি কর্মী। পুলিশের তরফে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগে কার্যত তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - < RG Kar Case: আরজি কর কাণ্ড: হঠাৎ কী কঠোর পদক্ষেপ কলকাতা পুলিশের? যা নিয়ে ফুঁসছে বিরোধীরা >
তার গ্রেপ্তারের ঠিক আগে, তিনি একটি বাংলা নিউজ চ্যানেলে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি ভাঙচুরের সময় হাসপাতালে ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি ভুল করেছি এবং ঘটনার জেরে আমি অনুতপ্ত। আমরা সবাই শ্যামবাজার থেকে গিয়েছিলাম। তিনি বি.কম স্নাতক বলেও উল্লেখ করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুকান্ত সেন শর্মার ঘনিষ্ঠ। তবে সুকান্ত বলেন, “আমি তাকে চিনি না। আমার মনে হয় না তিনি আমাদের দলের লোক। আজকাল সবাই টিএমসি সমর্থক বা কর্মী"।
ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে আরেক জন জব্বর আনসারি। এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তার বোন জানান, "ওই রাতের পর থেকে তিনি বাড়ি ফেরেননি। "আমরা জানি না তিনি কোথায় আছেন, তবে পুলিশ প্রতিদিন ফোন করছে,"। আমার ভাই এলাকায় পরিচিত টিএমসি কর্মী, সম্মানিত মানুষ।” তার বড় ভাইও বলেছেন, তিনি কোথায় আছেন তারা জানেন না।
আরজি কর থেকে প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে বাড়ি ঋষি কান্ত মিশ্রের। যাকে শুক্রবার রাতে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার ভাই লক্ষ্মণ মিশ্র বলেছেন, পুলিশ জানিয়েছে হাসপাতালে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় অভিযুক্ত সে। আমরা সঠিক কিছু জানি না। আমি থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে জানায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,”। তার বড় ভাই শ্রীকান্ত একজন ঠিকাদার। এলাকায় টিএমসি কর্মী হিসাবেই পরিচিত। ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সৌরভ দে'র পরিবার জানিয়েছে ,শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। "আমরা বিশ্বাস করি ও নির্দোষ," ।
গ্রেফতার হওয়া অপর একজন টুসি হালদার। তার পরিবার জানিয়েছে সে একজন ছাত্রী।
পুলিশের তরফে প্রকাশ করা ছবিতে তাকে জরুরী ভবনের ভিতরে একটি বাঁশ হাতে নিয়ে ভাংচুর চালাতে দেখা যায়। তার মা বিশাখা দাবি করেছেন, “আমরা সবাই সমাবেশের জন্য শ্যামবাজার গিয়েছিলাম। তারপর আরজি কর-এ গণ্ডগোল হয়েছিল এবং আমার মেয়ে সেই ঘটনায় ধরা পড়েছে।” ছবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জানান, তার মেয়ে নির্দোষ।
আরজি কর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বরানগরের বাসিন্দা রুমা দাসকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রুমাকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রুমা দাসের পরিবারের দাবি, “তার মোমবাতি মিছিলে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি আরজি কর-এ কীভাবে গেছিলেন সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। পরের দিন, পুলিশ আমাদের জানায় যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা কি করব জানি না"।
উল্টাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা, প্রদীপ সেন পেশায় একজন ড্রাইভার। তাকেও ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তার স্ত্রী পলি বলেন, ১৫ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করা হয়। যদি সত্যি ও এমন কাজ করে থাকে,তাহলে ওর শাস্তি হওয়া উচিত"।
তানভীর আলম, আগে গাড়ি চালালেও বর্তমানে তিনি বেকার। তিনিও হাসপাতালের আশেপাশে থাকেন। “পাড়ার সমস্ত ছেলেদের মতো, হট্টগোলের কথা শুনে তিনি আরজি কর-এর কাছে যান। পরের দিন আমরা দেখলাম কলকাতা পুলিশ তার জরুরী বিভাগের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি প্রকাশ করেছে,” কাকা মুখতার আলী বলেছেন। তিনি আরও বলেন, "আমরা তাকে দেখতে থানায় গিয়েছিলাম কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি,"।