বাংলায় বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পথ চলাকে স্বাগত জানাতে শুক্রবার বর্ধমান স্টেশন ছিল লোকে লোকারণ্য। উপস্থিত অনেকেই জাতীয় পতাকা হাতে ট্রেনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন মহিলাও ট্রেনটি আসার অপেক্ষায় ফুলের থালি হাতে নিয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন ঐতিহাসিক মুহুর্তেও কারও জন্য যেন একান্ত চিত্তে জনস্রোতের ঘেরাটোপ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন সুনীতাদেবী।
শুক্রবার বর্ধমান স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের এক কোনে কার প্রতীক্ষায় সুনীতাদেবী ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন তার আঁচ অবশ্য প্রথমে কেউ পাননি। তবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছোতেই ট্রেনের চালক অনিল কুমার জানালা দিয়ে সুনীতাদেবীর উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। তখনই বিষয়টি সবার নজরে আসে।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের চালকের আসনে স্বামীকে দেখতে পেয়েই ভিড় ঠেলে তাঁর কাছে এগিয়ে যান সুনীতা। এরাজ্যের প্রথম সেমি হাইস্পিড ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের চালক বর্তমানে বর্ধমানের বাসিন্দা অনিল কুমার। শুক্রবার বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছতেই চালক অনিলও হাতজোড় করে সবাইকে প্রণাম জানান। সামনে থেকে দাঁড়িয়ে স্বামীকে এমনভাবে শুভেচ্ছা জানানোর বহর দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন স্ত্রী সুনীতা। স্টেশনে উপস্থিত বাকিরা অনিল কুমারের গলায় মারা পরিয়ে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই দিনটি তাঁর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, স্বামীকে স্বাত জানানোর এই ধরণ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে জানিয়েছেন সুনীতাদেবী।
আরও পড়ুন- সুপার-ডুপার হিট বন্দে ভারত, ঝড়ের গতিতে ফুরোচ্ছে টিকিট
আদতে বিহারের বাসিন্দা হলেও অনিল কুমার বর্তমানে স্বপরিবারে বর্ধমানের লোকো সারদাপল্লীতে থাকেন। শুক্রবার টেলিভিশনের পর্দায় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে উন্মাদনা দেখে সুনীতাও বর্ধমান স্টেশনে না এসে থাকতে পারেননি। সুনীতাদেবী জানান, তাঁর স্বামী ট্রেনের অ্যাসিন্ট্যান্ট ড্রাইভার হিসাবে ১৯৯০ সালে কাজে যোগ দেন। তাঁর স্বামী অনিল কুমারের বরাবরই লক্ষ্য ছিল সব থেকে গুরত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো চালানো। বিভিন্ন মেল, এক্সপ্রেস চালানোর পাশাপাশি পূর্বা, কালকা, শতাব্দী, রাজধানী ও দুরন্ত এক্সপ্রেসও চালিয়েছেন অনিল।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর স্পেশাল ট্রেনিং নিতে চলতি মাসের ৭ তারিখ অনিল উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে গিয়েছিলেন। ট্রেনিং শেষে ১৯ তারিখ তিনি বর্ধমানের বাড়িতে ফিরে আসেন। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো দুরন্ত গতির ট্রেন চালানো স্বামীর কাছে আলাদা মাইলস্টোন ছোঁয়ার মতো বলেই জানালেন সুনীতা। শুক্রবার অবশ্য দেখা হলেও বর্ধমান স্টেশনে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি সুনীতা।