জ্বরে গত তিন দিনে মোট পাঁচ শিশুর মৃত্যু হল মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। গোটা উত্তরবঙ্গজুড়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯-য়ে। শিশুদের জ্বরকে কেন্দ্র করে এখন চরম আতঙ্ক রাজ্যের উত্তরের সব জেলায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই সেখানে গিয়ে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ দল।
উত্তরবঙ্গে জেলাগুলিতে বেড়েই চলেছে শিশুদের জ্বরের প্রকোপ। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালগুলিতে চালু করা হয়েছে ইনটেনসিভ ফিভার কেয়ার ইউনিট। প্রতিদিন যে হারে শিশুদের জ্বরে আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে তাতে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে বলেই মনে করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ।
শিশুদের জ্বর মোকাবিলার জন্য পাঁচ বিশেষজ্ঞ নিয়ে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। কমিটির প্রতিনিধিরা শিলিগুড়িতে পৌঁছনোর পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ঘুরে দেখেন। বর্তমান জ্বরের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের আধিকারিকদের সঙ্গে। হাসপাতালগুলিতে শিশুদের চিকিৎসায় শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ দেয় বিশেষজ্ঞ কমিটি। পরে, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যরা।
বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান চিকিৎসক রাজা রায় বলেন, 'জ্বর নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। পরিকাঠামো ও চিকিৎসা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। প্রতি বছরই এই সময়ে এ ধরনের জ্বর হয়। শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হলে সময়মতো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।' ওএসডি সুশান্ত রায়ের কথায়, 'উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৫০টি শয্যা বাড়ানো হবে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে এই জ্বরের কোনও সম্পর্ক নেই। একটি শিশুও করোনায় সংক্রমিত হয়নি। জেলা হাসপাতালেও পরিকাঠামো পর্যাপ্ত রয়েছে।'
জানানো হয়েছে যে, করোনা সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী হওয়ায় প্রয়োজনে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় শিশু বিভাগের করোনার শয্যা ব্যবহার করা হবে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালেও অন্তত ২০টি শয্যা বাড়বে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাড়ছে নজরদারি। ইতিমধ্যেই প্রতিটি জেলাতেই সবসময়ের জন্য মনিটরিং টিম তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।
আরও পড়ুন- লটারিতে বাজিমাত, কোটি টাকার টিকিট নিয়ে সটান থানায় যুবক
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ভিআরডি ল্যাবে জ্বরে আক্রান্ত ১০ শিশুর লালার নমুনায় কোনও সংক্রমণ ধরা পড়েনি। ফলে সেই সব শিশুদের লালার নমুনা পাঠানো হয়েছিল কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে যে, ১০ শিশুর শরীরে রয়েছে রেসপিরেটরি সিসিসিয়াল ভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজির বিভাগীয় প্রধান ডাঃ অরুণাভ সরকার বলেন, 'এই ধরনের ভাইরাস নতুন কোওন ভাইরাস নয়। প্রতি বছরই জ্বর সর্দি-কাশি হলে এই ধরনের ভাইরাস মেলে রোগীর শরীরে। শুধু শিশুরাই নয়, বড়রাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এতে আতঙ্কের কিছু নেই। শুধু সচেতন থাকতে হবে, আর শিশুদের জ্বর সর্দি-কাশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।'
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু বিভাগে ৬২ জন শিশু জ্বরে কাবু হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। যার মধ্যে একজন ডেঙ্গু ও একজন জাপানি এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে ৫৪টি মোট নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। যার মধ্যে তিনজন ডেঙ্গু, ১৩ জন ম্যালেরিয়া, তিনজন স্ক্রাব টাইফাস ও তিনজন জাপানি এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি মালদহে জ্বর নিয়ে হাসপাতালের শিশু বিভাগে ১৫০-জনের বেশি শিশু ভর্তি রয়েছে। শুধু শিশু বিভাগেই নয়, জ্বর এবং সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে বহু শিশুকে তাদের পরিবারের লোকেরা আউটডোরে দেখাতে আসছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন