ভোট ব্যাংকের রাজনীতিও যেন ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। রাজনীতি থাকবে, ভোট থাকবে আর তার ব্যাংক থাকবে না? নানা কায়দায় এই ভোট ব্যাংক সংগঠিত করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটাই রাজনীতিতে এক বড় প্রতিযোগিতা। গরিব নিয়ে ভোট ব্যাংক, ধর্মের ভোট ব্যাংক, জাতপাতের ভোট ব্যাংক আরও অনেক কিছু। আদপে সাধারণ মানুষের এর ফলে আদৌ কোনও লাভ হয় কি না তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, তবে ক্ষমতা দখলের জন্য ভোট ব্যাংক তৈরি করাই দস্তুর। রাজ্যেও বদলাচ্ছে ভোট ব্যাংকের গতিপ্রকৃতি।
এখন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা যখন বিশ্লেষণ করেন তখন সংখ্য়ালঘু ভোট ব্যাংক আর বলেন না একেবারে সরাসরি হিন্দু-মুসলিমের কথাই বলছেন। তৃণমূল ও বিজেপির লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে হিন্দু-মুসলিম ভোট বিভাজনের কথা এখন প্রকাশ্যেই বলে থাকেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এমন কী যুযুধান দুই পক্ষও একে অপরেরর দিকে আঙুল তোলেন ধর্মীয় ভোট ব্যাংক নিয়েই। আরও বড় বিষয় বিজেপি বা তৃণমূল নেতৃত্ব কখনও সরাসরি কখনও হাবেভাবে ধর্মীয় ভোট ব্যাংকের কথা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছে। এতে ভোট ব্যাংক আরও জোরদার হয় বলেই রাজনৈতিকক মহল মনে করছে। কিন্তু ধীরে ধীরে বাইনারি রাজনৈতিক ধারারও পরিবর্তন ঘটছে।
বিগত নির্বাচনেই গেরুয়া শিবির তপসিলি জাতি, উপজাতি ও পিছিয়ে পড়া জাতিদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছিল। ২০১৯ ও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায়, আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গলমহল ও রাজবংশী, মতুয়া প্রভাবিত বেশ কিছু জায়গায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। এরাজ্যে বেশ কয়েকবছর ধরেই নিজেদের ভোট ব্যাংক হিসাবে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছে মতুয়ারা। একসময় মতুয়ারা একচেটিয়া তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিলেও পরবর্তীতে বিজেপি ঠাকুরবাড়িতে ফাটল ধরিয়ে ভোটে ফায়দা পেয়েছে। এখনও মতুয়া সম্প্রদায় একটু ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখালেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মেটাতে উদ্যোগ নিতে হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন শান্তনু ঠাকুর। মতুয়ারাও দাবি করত রাজ্যে প্রায় ৮৩টি আসনে তাঁরা নির্ণায়ক শক্তি। এবার মাহতরাও দাবি করছে রাজ্যে ৫টি লোকসভা ও ২৬টি বিধানসভা এলাকায় তাঁরা নির্ণায়ক শক্তি।
আরও পড়ুন জঙ্গলমহলে CPIM-কে নিশানা, মমতার মুখে ‘পেটানো’ আর ‘বিচুটি পাতা’-র কথা
তপশিলি উপজাতিদের বাড়িতে পাত পেরে খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে মাহতরা তপশিলি উপজাতির সংরক্ষণ দাবি করেছে, অন্যদিকে অন্য আদিবাসীরা এই দাবি না মানার জন্য আবেদন করেছে। অর্থাৎ ফের নয়া সমীকরণ জঙ্গলমহলে।
ধর্ম বা জাতপাতের বসবাসের হার দেখেই প্রার্থী নির্বাচন করা নতুন কিছু নয়। যার ফলে টোটো সম্প্রদায়ের মতো লুপ্তপ্রায় আদিবাসীরা পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেও লোকসভা বা বিধানসভায় কখনও প্রার্থী হয় না। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় হলেও টোটো সম্প্রদায়ের একমাত্র এমএ পাসের চাকরি জোটে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, এমন ভোট ব্যাংকের রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত অন্তত এরাজ্যে আগে ছিল না। দিন যতই গড়াবে ভোট ব্যাংকের হিসেব আরও বদলাতে থাকবে। আরও সুক্ষ্ম থেকে সুক্ষ্মতর হবে।