Protest Aganist Waqf (Amendment) Act: ওয়াকফ-প্রত্যাহারে অশান্তির স্রোত, মুর্শিদাবাদে হিংসার বলি ২। এনিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বঙ্গ বিজেপি। হিংসা বন্ধে অতিরিক্ত ৫ কোম্পানি বিএসএফ মুর্শিদাবাদে পাঠানো হয়েছে।
ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল মুর্শিদাবাদ। বিক্ষোভের জেরে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। এমনই অভিযোগ বিজেপি নেতা অমিত মালব্যর। গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর উসকানিমূলক বক্তব্যকেই দায়ি করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
অশান্ত মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মুর্শিদাবাদের অশান্তি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা নামানোর দাবি জানান তিনি। শুভেন্দুর সেই আবেদনে মান্যতা দেন দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
হাইকোর্ট জানিয়েছে- 'এই ধরণের সংবেদনশীল বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখা যাবে না'। পাশাপাশি রাজ্য চলমান অশান্তির আবহে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব ভিসির মাধ্যমে একটি জরুরি বৈঠক করেন এবং রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং ডিজিপিকে অশান্তি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওয়াকফ আইন নিয়ে মুর্শিদাবাদ সহ বাংলার দিকে দিকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। সুতি, সামশেরগঞ্জের অশান্তিতে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অনেকে। মুর্শিদাবাদ এবং অন্যান্য এলাকায় অশান্তি পাকানোর দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি মানুষকে। এদিকে মুর্শিদাবাদে অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে, কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে।
ওয়াকফ-প্রত্যাহারে অশান্তির স্রোত, 'হিংসার বলি ২', দাবি বিজেপির। মমতার পদত্যাগের দাবিতে হুঙ্কার শুভেন্দুর। গতকালই সামশেরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন রাজ্যের ডিজিপি রাজীব কুমার। ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল মুর্শিদাবাদ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কেন্দ্রের। গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং ডিজিপির সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে রাজ্যের কাছে হিংসা বন্ধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে অশান্ত মুর্শিদাবাদে প্রায় ৩০০ বিএসএফ ছাড়াও আরও ৫ কোম্পানি বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদে এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে
১১ এপ্রিল, নতুন ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারে দাবিতে মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হুগলির বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি শুরু হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ভ্যান সহ বেশ কয়েকটি যানবাহন। মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্ট কী বলেছে?
শনিবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হিংসা কবলিত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে হাইকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেন। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে এই আবেদনের শুনানি হয়। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এমন সংবেদনশীল একটি ঘটনায় আদালত চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না। আদালতের মূল উদ্দেশ্য হল মুর্শিদাবাদে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা। দীর্ঘ সওয়াল জবাব শেষে বিচারপতি সৌমেন সেন মুর্শিদাবাদে অশান্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ডিজিপি কী বললেন?
রাজ্যের ডিজিপি রাজীব কুমার বলেছেন যে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ তবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সমগ্র পরিস্থিতির উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখা হচ্ছে। ডিজিপি আরও বলেন অশান্তি ছড়ানোর দায়ে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষকে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
রাজ্যের নানা প্রান্তে অশান্তির ঘটনায় মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ এদিন বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, " উন্নয়নের রাজনীতির মোকাবিলা করতে না পেরে কেউ কেউ বাংলাকে ধর্মের নামে ভেদাভেদ করে বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি বজায় রেখে, আমাদের শান্তি, সম্প্রীতি যাতে বিঘ্নিত না হয়, আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ কেউ চায় বাংলায় যাতে আগুন জ্বলে। বাংলাকে ভাতে মারতে, পেটে মারতে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে কেন্দ্রের এই অপচেষ্টা কিছুতেই বাস্তবায়িত হবে না"।
রাজ্য বিজেপি সভাপতির বড় বক্তব্য
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন যে মমতা সরকার সামশেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুরে অশান্তির ঘটনায় চোখ বন্ধ করে আছে। তিনি বলেন, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে এই ধরনের ভাঙচুর ও গুন্ডামি ৫ মিনিটের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হত"।
'বিজেপি নেতারা নির্বাচনের আগে বাংলায় দাঙ্গা তৈরি করতে চান'
তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মদন মিত্র বলেছেন যে বিজেপি নেতারা ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে বিভাজন করে বাংলায় হিংসা তৈরির চেষ্টা করছে। ছোটখাটো অশান্তির ঘটনা সব রাজ্যেই ঘটে। কেন্দ্রীয় সরকারও এর দায় এড়াতে পারে না। তারাই বিতর্কিত ওয়াকফ আইন চালু করেছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে, বিজেপি নেতারা বাংলায় দাঙ্গা তৈরি করতে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধতে চান। দেশে যত দাঙ্গা হচ্ছে তার জন্য অমিত শাহ, মোদী এবং যোগী দায়ী"।
'পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুর্শিদাবাদকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র'
অপর দিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুর্শিদাবাদকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র চলছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা, হত্যা কিছুই বাদ যাচ্ছে না। তবুও বাংলার ডিজিপি বলছেন কিছুই হয়নি।"