২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তখন পদ্মশিবিরে ভিড়েছিলেন দুর্গাপুর-আসানসোলের কয়লা মাফিয়া হিসাবে পরিচিত রাজু ঝা। গাড়ির খালাসি বা হিসাবের খাতা লেখার কাজ যা দিয়েই কর্মজীবনের সূত্রপাত হোক না কেন বেআইনি কয়লা কারবারে কোটি কোটি কামাইয়ের পাশাপাশি একাধিক ব্যবসা খুলে বসেছিলেন রাজু।
বাম তথা সিপিএমের জমানায় উত্থান কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া রাজুর। পুলিশ সূত্রে খবর, বাম আমলে আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান হয়ে ডানকুনি পর্যন্ত কয়লা পাচারে শেষ কথা ছিল রাজু। এই কয়লা মাফিয়া গায়ে রাজনীতির গেরুয়া চাদর চড়িয়েছেন গত বিধানসভা ভোটের আগে। বঙ্গ বিজেপিতে কাদের হাত ধরে দলে যোগ দিয়েছিলেন রাজু ঝা? কারাই বা সেদিন দলের অভ্যন্তরে তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন? তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দুর্গাপুরে রাজু ঝায়ের বিজেপিতে যোগের আগে দলের রাজ্য নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, 'আমি ওই সভায় থাকব না।' রাজু ঝায়ের যোগদান তিনি মেনে নেননি। সূত্রের খবর, সেই সময় তিনি দলের অভ্যন্তরে প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন কয়লা মাফিয়া রাজু ঝাকে নির্বাচনের মুখে যোগদান করানো হচ্ছে? রাজু খুনের পর বিজেপির প্রাক্তনী রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় টুইটে দাবি করেছেন, তিনিও বিরোধিতা করেছিলেন। প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় দিলীপ ঘোষ ও তৎকালীন দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে।
আরও পড়ুন- শিবপুরে হিংসা: এবার রাজ্যের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি মোদীর মন্ত্রীর!
বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, সেদিন কয়লা মাফিয়া রাজু ঝায়ের বিজেপিতে যোগদানের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন দলের রাজ্য নেতৃত্বের একটা বড় অংশ। কারও বিরোধিতায় কান দেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব। দুর্গাপুরে রাজু ঝায়ের যোগদানের আগে সভায় চেয়ার ভাঙচুর করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। সূত্রের খবর, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের ইচ্ছাতেই সেদিন বিজেপিতে ঠাঁই পেয়েছিলেন রাজু ঝা।
ওই সভায় তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নিয়েছিলেন রাজু ঝা। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ ঘড়ুই। দলের মধ্যেই চর্চা চলে, রাজ্য ভিত্তিক সংগঠনে বর্ধমান বা অন্যত্র অর্জুনের বিন্দুমাত্র প্রভাব না থাকলেও এই যোগদান পর্বে সক্রিয় ছিলেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে অর্জুন সিং তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন- রাজু খুনে বিজেপির তাবড় নেতাদের তোপ বাবুলের, কী সাফাই দিলীপদের?
সূত্রের খবর, শুধু বিজেপিতে যোগদানেই ক্ষান্ত থাকেননি রাজু ঝা। রানিগঞ্জে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিলেন তিনি। বিধানসভায় তাঁকে প্রার্থী করা হবে কি হবে না তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বৈঠকে রীতিমতো ঝড় উঠেছিল। তবে যাঁরা রাজুকে দলে এনেছিলেন তাঁরা অতিমাত্রায় সক্রিয় ছিলেন প্রার্থী করার জন্য। তাঁদের যুক্তি ছিল, প্রার্থী হলে নিশ্চিত জয় পাবে রাজু। যদিও গ্রেফতার হওয়ার কারণেই আর প্রার্থী হতে পারেননি এই কয়লা মাফিয়া। সিপিএমের আমলে উত্থান কয়লা মাফিয়া বিজেপি নেতা রাজু ঝায়ের বিধায়ক হওয়া স্বপ্নেই থেকে গেল।