ব্যস্ততম বর্ধমান স্টেশন। তখন ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাট দাঁড়িয়ে বহু যাত্রী। সেই সময়ই আচমকা যা হল তাতে হাড় হিম হওয়ার জোগার। প্রাণ গেল ৩ জনের। জখম বহু, চরম আতঙ্কে যাত্রীরা। ফের প্রশ্নের মুখে রেল স্টেশনে যাত্রী সুরক্ষা।
Advertisment
বুধবার দুপুর ১২টা বেজে ৮ মিনিটে বর্ধমান রেল স্টেশনে করোগেটেড শিটের তৈরি জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে বড়সর বিপত্তি ঘটে যায়। ট্যাঙ্ক ভেঙে প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা তিন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত তিন জন হলেন, সোনারাম টুডু (৩৫), মফিজা খাতুন (৩৫) এবং ক্রান্তি বাহাদুর (১৬)। ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে বাড়ি সোনারাম। মফিজা বর্ধমানের লাকুরডি এবং ক্রান্তি সাহেবগঞ্জের বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনায় জখমের সংখ্যা ৩৪ জন। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে আরপিএফ এবং দমকল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলে উদ্ধারকাজ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বর্ধমান স্টেশনের ২ এবং ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে যে জলের ট্যাঙ্কটি ছিল, আচমকাই তা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। কী করে ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ল তা এখনও পরিষ্কার নয়। বর্ধমান স্টেশনে দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বর্ধমান স্টেশনে ঝুল বারান্দা।
Advertisment
পূর্ব রেলের সিপিআরও কৌশিক মিত্র দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে সবদিক খতিয়ে দেখেন। পরে বর্ধমান হাসপাতালে যান। মৃতদের পরিবার ও জখমদের সঙ্গে কথা বলেন। সন্ধ্যার মুখে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'এখনও বর্ধমান হাসপাতালে জখম ৩০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। জখমদের পরিবারের হাতে ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার টাকার অনুদান অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রী মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।' যে জলের ট্যাঙ্কে ৫৩ হাজার ৮০০ গ্যালন জল মজুত করা হত তার রক্ষণাবেক্ষণ কী সঠিক ভাবে হত? সেফটি অডিট হয়েছিল? জবাবে সিপিআরও বলেন, 'হ্যাঁ রক্ষানাবেক্ষণ হয়। যা ঘটেছে সেটা একটা দুর্ঘটনা। ১৮৯০ সালে এই জলের ট্যাঙ্কটি তৈরি হয়েছিল। তবুও দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার জন্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কারুর গাফিলতির প্রমাণ মিললে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিকট শব্দের পরই আর্তনাদ শুনে বোঝা যায়, বেশ কয়েকজন চাপা পড়েছেন ধ্বংসস্তূপের নীচে। তাঁদের উদ্ধারের জন্য শুরু হয় ছোটাছুটি। ততক্ষণে আরপিএফ ও জিআরপিও ছুটে এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪ জনকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ৩ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।