West Bengal By-Elections: স্বচ্ছ ভোটের জন্য বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবি করেছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনেও। এবার ৭ দফায় বাংলায় লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারেও বিজেপির দাবি ছিল, বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কেউ টু শব্দটি করতে পারবে না। অবাধ ও নির্বিঘ্নে শান্তিতে মানুষ ভোট দেবে। লোকসভার ফলপ্রকাশের পর সুর পাল্টায় বিজেপি। লোকসভার বিজেপি প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর যে কোনও ভরসা নেই তা এদিন ফের দলীয় প্রার্থী থেকে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে এবার কাদের দায়িত্বে নির্বাচন সম্পন্ন হবে?
বাগদার গাদপুকুরিয়া মাদ্রাসা। সেখানে ছাপ্পা ভোট ও বুথ জ্যামের খবর পেয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বিনয় কুমার বিশ্বাস। সেখানে বুথ থেকে বের হতেই বিক্ষোভ, চড়, থাপ্পর, ঘুসি খান বিজেপি প্রার্থী। ভাঙচুর করা হয় প্রার্থীর গাড়ি। প্রার্থীকে রীতিমতো পালিয়ে বাঁচতে হল। বুথের সামনে এমন আক্রমণের ঘটনায় ভোটের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
শুধু বাগদা নয়, রানাঘাট দক্ষিণ, রায়গঞ্জ ও মানিকতলার ভোট নিয়েও প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। রানাঘাটের দেবগ্রামে বিজেপি প্রার্থী মনোজ বিশ্বাসকে বুথে ঢুকতে বাধা দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিজেপি প্রার্থীকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, 'দালালি করছেন এখানে।' কর্তব্যরত জওয়ান পাল্টা জবাব দেন। আবার বিজেপি প্রার্থী বলেন, 'মদ-মাংস, পয়সা খেয়েছেন। আপনি তৃণমূল করেন নাকি।' এদের আচরণ আচরণ তৃণমূলের দালালের মতো বলছেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী।
রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থী মানস ঘোষকে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। তিনিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এদিন চারটি কেন্দ্রেই বিজেপি প্রার্থীকে দেখলেই গো-ব্যাক স্লোগান দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন। গত লোকসভা নির্বাচনেও এই স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল জোরাফুল শিবির। ঘাসফুল শিবিরের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান সঙ্গে নিয়ে গিয়ে শান্তির ভোটে বাধা দিচ্ছেন বিজেপি প্রার্থীরা। কোথাও কোনও ছাপ্পা হয়নি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের ওপর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে বিজেপির প্রতিনিধিদল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। তাপস রায়, অর্জুন সিংরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ছাপ্পা, রিগিং, বুথ দখল করলেও আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই। তামাশা দেখছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন। একটি বুথে ওয়েব কাস্টিংয়ের ছবি দেখিয়ে ছাপ্পার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। তাঁদের কথায়, এসব ওয়েব কাস্টিংয়ে কিছু হয় না। কোনও অ্যাকশন নেই। শুধু কম্প্রোমাইজড। দিনের শেষে নির্বাচন কমিশন বলবে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।
তৃণমূলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি তো বিজেপিই করে আসছে। এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও তাদের অভিযোগ! ক্রমাগত কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় বা যে কোনও স্তরেই বোঝাপড়ার অভিযোগ করে চলেছে বিজেপি। রাজ্য পুলিশের ওপর বিজেপির ভরসা নিয়ে তো কোনও প্রশ্নই নেই। এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরও আস্থা হারিয়েছে বিজেপি। রাজ্যে আগামী ২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন কি দাবি উত্থাপন করে গেরুয়া শিবির, সেটাই এখন দেখার।