বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে কার্যত ভারত শাসনের ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্প মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গকে আরও সমৃদ্ধিশালী করে তোলার লক্ষ্যেই বেশ কয়েক বছর ধরে এই সম্মেলনের আয়োজন করে চলেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এবার সেই মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্পনীতি বদলের ডাক দিলেন জাতীয় স্তরের অন্যতম বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের মঞ্চে এদিন নাম না করে মোদী সরকারকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশ বিদেশের শিল্পপতিদের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘‘সামনেই ভোট রয়েছে দেশে। অনেক শিল্পপতি বন্ধুরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন নানা সমস্যার জন্য। এ নিয়ে এখানে কিছু বলব না। তবে আমি তাঁদের অনুরোধ জানাবো তাঁরা যেন এ দেশে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসেন।’’ এরপরই মমতা বলেন, ‘‘জানি, আপনারা কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, কিন্তু আমি কথা দিতে পারি, সরকার বদলালে নতুন পলিসি আনা হবে।’’
আরও পড়ুন- রাজীব কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের অন্দরে ঘুরছে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ! কী লেখা তাতে?
কৃষকদের আয়ের কথা নিয়ে ফের এদিন মুখ খুলেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যে কৃষকদের আয় দেশের থেকেও বেড়েছে। এখানে আমরা কৃষকদের আয় তিনগুণ করেছি।’’ দেশে কর্মসংস্থানের থেকে এ রাজ্যে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও এদিন মন্তব্য করেন মমতা। উল্লেখ্য, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ বাড়ানোর কথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই নয়, লোকসভা ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটে কৃষকদের জন্য একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে মোদী সরকার।
এদিন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনে মমতা বলেন, ‘‘আগের থেকে বাংলা অনেক বদলে গিয়েছে। বাংলা নিয়ে পুরনো ধ্যানধারনা বদলাচ্ছে। বাংলায় এখন কোনও কর্মদিবস নষ্ট হয় না। বাংলাই একমাত্র জায়গা যেখানে কোনও বৈষম্য নেই। সকলে একসঙ্গে মিলে কাজ করি। বাংলা মানেই ব্যবসা।’’ মমতার এদিনের বক্তৃতা জুড়ে ছিল তাঁর আমলে বাংলায় উন্নয়নের ফিরিস্তি।
আরও পড়ুন- ফের ধর্না মেট্রো চ্যানেলে, এবার মমতার বিরুদ্ধে ময়াদানে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী
শিল্পপতিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা, পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার। ফলে বাংলায় বিনিয়োগ করলে, ওই রাজ্যগুলিও উপকৃত হবে।’’ বিনিয়োগকারীদের কাছে রাজ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘গত ৭ বছরে ৪২টি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়া হয়েছে। গত ৭ বছরে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলায় তিনশোরও বেশি পলিটেকনিক ও আইটিআই তৈরি করা হয়েছে।’’
অন্যদিকে, কলকাতা-ফ্রাঙ্কফোর্ট সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করার জন্য জার্মানি প্রতিনিধিদের কাছে প্রস্তাব রেখেছেন মমতা। পাশাপাশি, জার্মান শিল্পপতিদের অটোমোবাইল শিল্প স্থাপনেরও প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন ইটালি, আমেরিকার প্রতিনিধিদেরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চিন, জাপান, কোরিয়ার মতো দেশ থেকে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আমরাও যেমন ওখানে যাব। ওঁরাও এখানে আসবেন। এভাবেই আদানপ্রদান চলতে থাকবে।’’
আরও পড়ুন, কেলেঙ্কারি! মমতার ধর্না মঞ্চের সামনে রাস্তা অবরোধে চিটফান্ড ক্ষতিগ্রস্তরা
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মঞ্চে মমতা বলেন, ‘‘গতবছর ১০ লক্ষ কোটিরও বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, এ বছর আরও বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব আসবে।’’
বাংলার উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যে নয়া শিল্প নীতি হয়েছে। দেশে গ্রামীণ উন্নয়নে আমরা এক নম্বরে। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে আমরা একনম্বর জায়গায় রয়েছি। গ্রামে কাজের সুযোগ করে দেওয়ায় আমরা এক নম্বর। সংখ্যালঘুদের স্কলারশিপ প্রদানে একনম্বরে বাংলা।’’ মমতার আরও দাবি, ‘‘বাংলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ মেলে। এখানে লোডশেডিং হয় না। যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত।’’