দীর্ঘ ৫ বছরের ওপর এরাজ্যে প্রায় সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের ভোট হয়নি। ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘোষণার পরেও তা বাতিল করে দেওয়া হয়ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এখানে ডাক্তারি পড়ুয়ারা নির্বাচনের দাবিতে প্রথমে কলেজ কতৃপক্ষকে ঘেরাও করে, এখন আমরণ অনশন করছে। রবিবার ছাত্রদের এই অনশন চার দিনে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেন ছাত্ররা। কেন বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ছাত্র সংসদ নির্বাচন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকবে তা নিয়ে চিকিৎসক সংগঠনের কর্তারাও সরব হয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন ঘোষণা করেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কোনও কারণও বলা হয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, তাহলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন পর্ব এই কলেজে হলে অন্য কলেজগুলিতেও নির্বাচনের দাবিতে সরব হবে ছাত্ররা। এখানকার ছাত্র সংসদ কি বিরোধীদের দখলে চলে যাবে? এখানেই প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন ঘোষণা করে দেওয়ার পর কি কারণে তা বন্ধ করে দেওয়া হল।
শুধু বিরোধীরা নয়, শাসকদলের একাংশ মনে করছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন খুবই জরুরি। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা বিধায়ক তাপস রায় বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অবিলম্ব হওয়া দরকার। কিন্তু সরকারি তরফে এখনও কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এরাজ্যে ছাত্র আন্দোলন থেকে ডান-বাম নেতৃত্ব উঠে এসেছে। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ছাত্ররা প্রতিবাদে নেমেছে, এই দৃশ্য বারে বারে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েকবছর ধরেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। শাসকদলের একাংশের মতে, গন্ডগোল এড়াতে নির্বাচন বন্ধ রাখা উচিত। তবে এই দাবি উড়িয়ে দিচ্ছে রাজনৈতিক মহলের বড় অংশ।
আরও পড়ুন- ‘টেট বানচালের চেষ্টা’, পরীক্ষা চলাকালীনই মারাত্মক অভিযোগে শোরগোল ফেললেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ছাত্ররা রাজনীতি সচেতন না হলে আগামী রাজনৈতিক প্রজন্মের ভীত নড়বড়ে হয়ে যাবে। বর্তমানে ডান-বাম রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের ভাষার 'মাধুর্য' বুঝিয়ে দিচ্ছে তাঁদের শিক্ষা ও সমাজ সচেতনতা। ছাত্র আন্দোলন থেকে নেতৃত্ব না উঠে এলে পরিস্থিতি আগামী দিনে কি ভয়ানক হতে পারে তা সহজেই অনুমান করতে পারছে অভিজ্ঞমহল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ রয়েছে, রয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। তারা কি এতটাই নড়বড়ে ছাত্র সংসদ নিয়ে অযথা ভয় পাচ্ছেন, উঠছে সেই প্রশ্নও।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নির্বাচন না করে ছাত্রদের একাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা ক্ষমতা ভোগ করে চলেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে। এই কারণেই বিরোধী কন্ঠস্বর জোরালো হচ্ছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো বজায় রাখতে গেলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়াদের অনশন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবির নয়া মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।