TMC wins 29 seats In Bengal: এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয় পাওয়া ২৯টি আসনের মধ্যে ১০টিতে একেবারে মসৃনভাবে জয় পেয়েছেন প্রার্থীরা। এই ১০টি আসনে বিরোধী ভোট কাটাকাটির খেলায় তৃণমূলের জয় এসেছে একথা বলা যাবে না। এই আসনগুলিতে তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট মূল বিরোধী দলগুলির ভোট যোগ করলেও অনেকটাই বেশি। দু-একটি ক্ষেত্রে জয়ের ব্যবধান বিরোধীদের প্রাপ্ত ভোটের থেকে বেশি। অন্যদিকে বাকি ১৯ কেন্দ্রে বিরোধীদের ভোট কাটাকুটিতে তৃণমূলের জয় সহজ হয়েছে।
ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর, জয়নগর, বসিরহাট, বোলপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, ঘাটাল, দক্ষিণ কলকাতা ও ঝাড়গ্রাম আসনে তৃণমূলের জয়ের ক্ষেত্রে বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হওয়া কোনও ফ্যাক্টর হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগণার তিনটে আসন এই তালিকায় আছে। ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান ৭,১০,৯৩০। বিরোধী প্রার্থীদের মিলিত ভোট ব্যবধানের সংখ্যার ধারে-কাছে নেই। এই জেলার আরও দুই কেন্দ্র জয়নগরে প্রতিমা মন্ডল ৪,৭০,২১৯ ও মথুরাপুরের বাপি হালদার ২,০১,০৫৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। বসিরহাটে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ৩,৩৩,৫৪৭ ভোটের ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে পরাজিত করেছেন। বোলপুরের অসিত কুমার মাল জয় পেয়েছেন ৩,২৭,২৫৩ ভোটের ব্যবধানে। হাওড়া জেলার দুই কেন্দ্র হাওড়া ও উলুবেড়িয়ায় তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট বিরোধীদের যুক্ত ভোটের থেকে অনেক বেশি। দক্ষিণ কলকাতা ও ঝাড়গ্রামে তৃণমূল প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট বিরোধীদের ভোট যোগ করলেও অনেকটাই বেশি। মোদ্দা কথা রাজ্যের ১০টি আসনে বিরোধী ভোট কাটাকুটির খেলায় তৃণমূল জয় পেয়েছে একথা বলা যাবে না।
আরও পড়ুন : < Abhishek Banerjee: বল অভিষেকের হাতে! দুরত্ব ঘূর্ণিতে ঘুরে যেতে পারে গোটা খেলা? ইণ্ডিয়া জোটে বাড়তি গুরুত্ব ‘যুবরাজ’কে >
এদিকে বাকি ১৯টি কেন্দ্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে বিরোধীদের মধ্যে ব্যাপক ভোট কাটাকুটি হওয়ায় তৃণমূল প্রার্থীদের জয় অনেক সহজ হয়েছে। মুর্শিদাবাদের তিন কেন্দ্রেই বিজেপি ও কংগ্রেস-বাম প্রার্থীদের ভোট ভাগাভাগির চূরান্ত ফায়দা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বহরমপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান ভোট পেয়েছেন ৫,২৪,৫১৬। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী ৪,৩৯,৪৯৪ ও বিজেপির ডঃ নির্মল সাহা ৩,৭১,৮৮৫টি ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ কংগ্রেস ও বিজেপির ভোট যোগ করলে দাঁড়ায় ৮,১১,৩৭৯। সেক্ষেত্রে স্পষ্ট ভোট কাটাকুটির খেলায় বাজিমাত করেছে ইউসুফ। এমন ভাবেই মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গীপুর কেন্দ্রে ঘাসফুল সহজে ফুটেছে।
এমনকী কৃষ্ণনগরে সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদি ভালো ভোট পাওয়ায় তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের জয় আরও সহজ হয়েছে। এই কেন্দ্রে কৃষ্ণনগর তৃণমূলে মহুয়া মৈত্র পেয়েছেন ৬,২৮,৭৮৯টি ভোট। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় ৫,৭২,০৮৪ ও সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদির প্রাপ্ত ভোট ১,৮০,২০১। বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রে বিরোধী ভোট তিন ভাগে ভাগ হয়েছে। এখানে আইএসএফ প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ১,২১,৪৪০টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ১,০০,০০০টি ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থান পেয়েছে। বিজেপির স্বপন মজুমদার পেয়েছেন ৫,৭৭,৮২১টি ভোট। অন্য দিকে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার ৬,৯২,০১০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এখানে তিন প্রার্থীর ভোট এক হলে পিছিয়ে যেতেন কাকলি দেবী।
দমদম কেন্দ্রেও বিরোধী ভোট কাটাকুটির ফল পেয়েছেন বর্ষীয়াণ তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়। এই কেন্দ্রে সৌগত রায় পেয়েছেন ৫,২৮,৫৭৯টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তের প্রাপ্ত ভোট ৪,৫৭,৯১৯ ও সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী পেয়েছেন ২,৪০,৭৮৪টি ভোট। বামের প্রাপ্ত ভোটের ৩০% রাম পেলেই দিল্লি যাওয়া আটকে যেত সৌগত রায়ের।
আরও পড়ুন : < Loksabha Elections Results 2024: সন্দেশখালি ইস্যুতে খেলা ঘোরালো বিজেপি, সবুজ ঝড়েও কীভাবে পেল এক্সট্রা মাইলেজ? >
কোচবিহার, ব্যারাকপুর, যাদবপুর, কলকাতা উত্তর, শ্রীরামপুর, হুগলি, আরামবাগ, মেদিনীপুর, বর্ধমান দুর্গাপুর, বর্ধমান পূর্ব, আসানসোল, বীরভূম ও বাঁকুড়া কেন্দ্রে বিরোধীদের ভোট কাটাকুটিতে ফায়দা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এর মধ্যে সব থেকে কম ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে আরামবাগ আসনে। এই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিতালী বাগ ৭,১২,৫৮৭টি ভোট পেয়েছেন। বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ৬,৩৯৯। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগর ৭,০৬,১৮৮টি ভোট পেয়েছেন, সিপিএমের বিপ্লব কুমার মৈত্র ৯২,৫০২টি ভোট পেয়েছেন। এমনকী নির্দল রঘু মল্লিকের প্রাপ্ত ভোট ১৬,১৩০। আরামাগ কেন্দ্রে ২০১৯ নির্বাচনে ১১৪২ ভোট জয়ী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার। এবারও কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। রাজনৈতিক মহলের মতে, বামের ভোট রামে গেলে একাধিক আসন তৃণমূলের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।