বঙ্গে কি আছড়ে পড়ল চতুর্থ ঢেউ? এখনই এব্যাপারে কিছু বলতে চাইছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে বাংলায় রীতিমতো কাঁপুনি ধরাচ্ছে করোনা। গতকালের চেয়ে এক ধাক্কায় প্রায় দ্বিগুণ সংক্রমণ রাজ্যে। দৈনিক সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। লাগোয়া দুই জেলাতেও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ভাইরাস। সব মিলিয়ে পুজোর মাত্র কয়েক মাস আগে বাংলার করোনা পরিস্থিতি ফের একবার ভয় ধরাতে শুরু করেছে। সংক্রমণ বাড়তেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ইনডোর এবং আউটডোর রোগীদের জন্য একটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন। গতকাল এই পরিসংখ্যান ছিল ১১৩২। একদিনে করোনা কামড়ে বঙ্গে মৃত্যু আরও ৩ জনের। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও। বাংলায় গত ১০ দিনে করোনা সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যদিও বেশিরভাগ আক্রান্তেরই উপসর্গ নেই অথবা থাকলেও মৃদু। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই আনুপাতিক হারে বেড়ে চলেছে গুরুতর অসুস্থের সংখ্যাও। ফলে গত ১০দিনে করোনা সংক্রমিত রোগীর হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও প্রায় সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিড পজিটিভিটি রেটও দ্বিগুণ হারে বেড়ে গিয়েছে।
নয়া বিধি অনুসারে যারা যোগ্য তাদের জন্য টিকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহারে ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে এন 95 মাস্ক, গ্লাভস, ফেস শিল্ড এবং প্লাস্টিকের অ্যাপ্রন অ্যাসিম্পটোম্যাটিক রোগীদের অপারেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট। এই ধরনের ক্ষেত্রে পিপিই ব্যবহার করার দরকার নেই বলেও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্দেশিকায় কঠোর ভাবে বলা হয়েছে পরীক্ষার সুবিধার অভাবের জন্য কোনও রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা যাবে না। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে রোগীর কোভিডের লক্ষণ না থাকলে অস্ত্রোপচারের আগে (বড় বা ছোট) কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। সেই সকল ক্ষেত্রে রোগীদের উপসর্গ বুঝে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক যেখানে রোগীরা নাক এবং মুখের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর অথবা অন্যান্য করোনা উপসর্গ ব্যক্তি বিশেষ করে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৯৪ বা তার কম তাদের হাসপাতালে ভর্তির কথাও নির্দেশে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ওপরেও জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: <কলকাতা জুড়েই ভুয়ো কল সেন্টারের রমরমা,পুলিশি অভিযানে ধৃত ১০>
কয়েকদিনেই ফের একবার উদ্বেগ তুঙ্গে তুলেছে করোনা। রাজ্যে-রাজ্যে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। পশ্চিমবঙ্গেও পুজোর মাত্র কয়েক মাস আগেই হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি মাতায় রেখে তাই আগেভাগে সচেষ্ট রাজ্য সরকার। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইতিমধ্যেই রাজ্যের তরফে জারি করা হয়েছে গুচ্ছ নির্দেশিকা। সেই সঙ্গে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ১৯ বেডের কোভিড সিসিইউ চালু করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা ছাড়াও জেলার হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, এখনই যদি সতর্ক না হওয়া যায় তবে পরিস্থিতি কিন্তু হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন পরিস্থিতি যে দিনে এগোচ্ছে তাতে চতুর্থ ঢেউ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: একধাক্কায় প্রায় দ্বিগুণ সংক্রমণ, বঙ্গে কাঁপুনি ধরাচ্ছে করোনা
সামনেই উৎসবের মরশুম। তার মাঝে করোনার এই বাড়বাড়ন্ত প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সংক্রমণের গণ্ডি দেড় হাজার পেরোতেই নয়া নির্দেশিকা জারি করল নবান্ন। সেখানে মাস্ক স্যানিটাইজার আবারও বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি হাসপাতালগুলিকে কোভিড প্রটোকল মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে টিকাকরণেও।