ডিজিটাল জমানায় সমাজের আয়না হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। চারপাশে যা হচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষোভ, বিদ্রোহ, বিক্ষোভ, সমর্থন, প্রতিবাদ, সবটাই এখন ফেসবুক অথবা টুইটারের দৌলতে মুহূর্তে পৌঁছে যায় মানুষের কাছে। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা নিয়েও এমনটাই হচ্ছিল বিগত দিন চারেক ধরে। কাশ্মীর উপত্যকায় হিংসার জন্য কতটা দায়ী প্রতিবেশি দেশ, আর কতটা ভারতের 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস', তাই নিয়ে ফেসবুকে কলম ধরেছিলেন অনেকেই।
এঁদের মধ্যে ছিলেন দুর্গাপুরের কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার এই কর্মীর বিতর্কিত ফেসবুকের পোস্টের জন্য যাঁকে আপাতত বরখাস্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। পোস্টের নির্যাস এরকম, "খুব নির্মম শোনালেও এটা আমি স্বীকার করছি, কাশ্মীরে যখন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিরীহ মানুষগুলো মারা যায়, তা আমার কাছে সিআরপিএফ জওয়ানদের মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি দুঃখজনক। রাষ্ট্র যদি গণহত্যা চালাতে থাকে, কখনও কি কেউ তার প্রতিশোধ নেবে না?" এই পোস্ট করার পর থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই বলতে থাকেন, এমন 'দেশ-বিরোধী' মন্তব্য করার জন্য কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এলআইসি-র। বর্তমানে অবশ্য পোস্টটি তুলে নিয়েছে ফেসবুক।
আরও পড়ুন, নিশানায় কেন্দ্র, প্রতিবাদে ফের মুখর মমতার কবিতা
বাঁ দিকে বিতর্কিত সেই পোস্ট। ডানদিকে এলআইসি-র নোটিস
১৪ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ হামলার দিনই পোস্টটি করেন কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত। এর পর এলআইসি-র দুর্গাপুর-১ শাখায় নিজের দফতরে অন্যান্য দিনের মতোই কাজ করেন ১৫ এবং ১৬ তারিখ। ১৬ তারিখ বিকেলে খবর পান, তাঁর বাড়িতে সংস্থার পক্ষ থেকে নোটিস পাঠিয়ে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা ঠিক হওয়ার আগে এলআইসি-র কোনো শাখাতেই ঢুকতে পারবেন না সংস্থার এই কর্মী।
আরও পড়ুন, চিত্রদীপের নিগ্রহ: ঠিক কাজ নয়, একমত বিজেপি-বজরং নেতারা
এলআইসি-র আসানসোল শাখার সিনিয়র ডিভিশনাল ম্যানেজার আশুতোষ কুমারের স্বাক্ষর রয়েছে নোটিসে। কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার পক্ষ থেকে। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় এখনও তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, "পরিষ্কার ভাষায় সকলকে জানিয়ে দিতে চাই, আমি আমার দেশকে ভালবাসি, দেশবাসীকে ভালবাসি, এবং দেশের যে কোনো মানুষের মৃত্যু আমাকে যন্ত্রণা দেয়। পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় আমাদের জওয়ানদের মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত ব্যথিত। আমার ফেসবুক পোস্টটির উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত ব্যাখ্যা করে আমার বিরুদ্ধে 'দেশদ্রোহিতা'-র মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজ ও হুমকিও চলেছে।
"এর পাশাপাশি, আমার এমপ্লয়ার এলাইসি কর্তৃপক্ষও এই মিথ্যা অভিযোগের চাপে তড়িঘড়ি আমাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রায় ২৪ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে চাকরি করার পর, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমি চাই না আমার দেশের আর একজন জওয়ানেরও মৃত্যু হোক। যাঁরা যুদ্ধ চাইছেন তাঁরা ভেবে দেখুন তাঁরা আসলে কী চাইছেন। আরও রক্ত? আরও জওয়ানের মৃত্যু? আমি কিন্তু চাই না। কারণ, আবারও বলি, আমার দেশের একজন জওয়ানের মৃত্যুও আমাকে যন্ত্রণা দেয়। আমার দেশকে আমি ভালবাসি, এই যুদ্ধবাজদের থেকে বেশীই ভালবাসি"।