কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রক্ষাকবচ উঠতেই শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোহনপুর থানার পুলিশ বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। গত বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর রক্ষাকবচ তুলে নেয় হাইকোর্ট। আর তার পাঁচদিনের মাথায় শুভেন্দুর নামে মামলা দায়ের হল। এর জেরে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০৯, ১২০ বি, ১৫৩, ১৫৩এ, ১৭১এফ, ১৭১জি, ৩৫৩, ৫০৫(১), ৫০৫(২)- এই এতগুলি ধারায় শুভেন্দুর নামে মামলা দায়ের হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন মোহনপুর থানার রামপুরা এলাকায় ব্যালট বাক্স পুকুরের জলে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাতেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার ওই ঘটনাতেই পুলিশ এই এফআইআর করেছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা খেয়েছেন বিরোধী দলনেতা । শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারবে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার এই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বরূপ চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ।
নির্দেশে বলা হয়েছে যে, অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে। যদি দেখা যায়, অভিযোগ সত্য, গ্রহণযোগ্য- তাহলে পুলিশ এফআইআর করতে পারবে। তবে গ্রেফতার বা কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার একক বেঞ্চ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের দায়ের করা ২৬টি এফআইআরে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। ওই এফআইআরগুলি নিয়ে তদন্ত আর না এগোনোর জন্য বলেছিল হাইকোর্ট। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নতুন মামলা করতে গেলেও আদালতের অনুমতি নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি মান্থা।
আরও পড়ুন ‘তদন্তে ঢিলেমি দেখলেই প্রধানমন্ত্রীকে জানাব’, সিবিআইকে ধমক বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে, এমনকী সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ প্রথমে একক বেঞ্চের নির্দেশের উপর হস্তক্ষেপ করতে চায়নি। তাই রাজ্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু সেই মামলা সুপ্রিম কোর্ট আবার হাইকোর্টেই ফিরিয়ে দিয়েছে। সেটি এখনও বিচারাধীন।
এসবের মধ্যেই নতুন করে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন সুমন সিং নামে এক আইনজীবী। বুধবার প্রধান বিচারপতি উপস্থিত না থাকায় জনস্বার্থ মামলাটি শোনে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যা ও বিচারপতি বিশ্বরূপ চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে। সেই মামলায় বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেছিলেন যে, আদালত কোনও একটি নির্দেশের মাধ্যমে এফআইআর-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে কি ১০ বছর পরেও কোনও অভিযোগ উঠলে এফআইআর করা যাবে না?
তারপরই গত বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানিতে বিচারপতি জানিয়ে দিলেন, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর করার ক্ষেত্রে পুলিশকে আগাম অনুমতি নিতে হবে না আদালত থেকে। তবে এফআইআর করা মানেই গ্রেফতারি নয়। বিরোধী দলনেতাকে গ্রেফতারির প্রয়োজন মনে করলে পুলিশকে আদালতে জানাতে হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রথমে পুলিশ একটি রিপোর্ট তৈরি করবে। তারপর সেই রিপোর্ট পাঠাবে পুলিশের ডিজিকে। ডিজি সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দেবেন। প্রয়োজনে সব দিক খতিয়ে দেখে শুভেন্দুকে গ্রেফতারির নির্দেশ দেবে হাইকোর্ট।