রাজনীতির আঙিনা থেকে এবার সরাসরি স্কুলের প্রশ্নপত্রে ঢুকে পড়ল 'জয় শ্রীরাম' ও 'কাটমানি'। হুগলির মগরা থানার আকনা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় এই দুই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছে। আর এ নিয়েই চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। দশম শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন বিষয়ের উল্লেখ দেখে স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপি উভয় পক্ষই প্রশ্নকর্তা শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছে। এদিনও স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলার ওই শিক্ষক লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে এ যাত্রা 'রেহাই' পেয়েছেন।
আকনা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়।
জানা যাচ্ছে, বাংলা পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে আকনা স্কুলের শিক্ষকদের নজরে আসে বিষয়টি। তাঁরা দেখেন, ৭ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, 'যে কোনও একটি প্রশ্নের দাও'। কী সেই প্রশ্ন? কমবেশি ১৫০ শব্দে একটি প্রতিবেদন রচনা করতে বলা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। প্রতিবেদনের বিষয়, 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি এবং 'কাটমানি'। প্রশ্নপত্রের ভাষা অনুযায়ী, 'জয় শ্রীরাম সমাজ জীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, এ প্রসঙ্গে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন রচনা কর', অথবা 'দুর্নীতিদমনে কাটমানি বন্ধ ও ফেরৎ পঃবঃ সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ এ বিষয়ে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন রচনা কর'। এই দুই প্রশ্ন নিয়েই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত। প্রথমে স্কুলে শিক্ষকদের মধ্যে তরজা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণ পরই প্রশ্নপত্র নিয়ে স্কুলের বাইরে রাজনৈতিক বিতর্কে দেখা দেয় এই।
কী বলছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক?
প্রধান শিক্ষক রোহিত কুমার পাইন বলেন, "দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে এই ভুল হয়েছে। প্রেস থেকে সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন চলে যায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে বিষয়টি জানাজানি হয়। বাংলার শিক্ষক সুভাশিষ ঘোষকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই ধরনের প্রশ্ন কোনওভাবে প্রশ্নপত্রে দেওয়া উচিত হয়নি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে নিন্দা করি এবং প্রশ্নটাকে বাতিল করে দিই। ছাত্রছাত্রীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য ৫ নম্বর গ্রেস দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। ওই শিক্ষক নিজে পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। তিনি লিখিতভাবে ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনিও বুঝেছেন যে এটা অনভিপ্রেত। রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে করা হয়নি। আগামী দিনে ভুল না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/Question-Inner-pics-1.jpg)
এই দুই প্রশ্নের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার স্কুলের সামনে প্রতিবাদ করেছে বিজেপি। পরে প্রধান শিক্ষক ও বাংলার শিক্ষকের সঙ্গে তাঁরা দেখাও করেন। জানা গিয়েছে, তখনই বাংলার শিক্ষক ক্ষমা চেয়ে নেন। স্থানীয় বিজেপি নেতা সুবীর নাগ বলেন, "স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রাজনীতিকরণের চেষ্টা। আমরা নাকি শিক্ষায় গৈরিকীকরণ করছি! সেখানে এমন একটা প্রশ্ন হল এখানকার স্কুলে! এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি।
এদিকে, এই প্রশ্নকাণ্ডে তৃণমূল কংগ্রেসও ক্ষুব্ধ। তৃণমূল নেতা নির্মল ঘোষ বলেন, "এই প্রশ্ন লজ্জাজনক। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্য়বস্থা নেওয়া দরকার। যাতে এমন ভুল করার আগে পাঁচবার ভাবে। এই প্রশ্নের ফলে রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারত। শিক্ষকের শাস্তি দাবি করছি।"