দিল্লিতে নিগ্রহ, বাংলায় আন্দোলন। বকেয়া আদায়ের আন্দোলনকে ছাপিয়ে গেল নেতৃত্ব হেনস্থার প্রতিবাদ কর্মসূচি। সামনেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। তার আগে নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটতেই থাকবে। প্রথম দফায় বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে সামিল কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূল। দ্বিতীয় দফায় ফের দিল্লি ছুঁয়ে বাংলায় বাইনারি পলিটিক্সের প্রতিচ্ছবিই কি বিদ্যমান?
বৃহস্পতিবারের রাজভবন ঘেরাওয়ের আগেই রাজ্যের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ, মিছিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতা, বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তরবঙ্গ সর্বত্র দিল্লিতে চ্যাংদোলা, টানাহ্যাঁচড়া, নেতৃত্বকে হেনস্তার প্রতিবাদ জানাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি আসানসোলে বিজেপির কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটেছে। আটক করা হয়েছে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দিল্লিতে কৃষিভবনের ঘটনাকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছে না তৃণমূল কংগ্রেস। গরিবের টাকা আদায় করতে গিয়ে নেতৃত্বকে দিল্লিতে বিজেপির পুলিশের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে, সেই বার্তাই দিতে চায় দল।
আরও পড়ুন- অভিষেককে তলব নিয়ে ইডি’কে বড় প্রস্তাব হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের
এদিকে দিল্লির কৃষিভবনের ঘটনাকে বিজেপি-তৃণমূলের গটআপ বলেই দাবি করেছে সিপিএম। প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূলের পাঁচ প্রতিনিধির সঙ্গে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী দেখা করবেন অথচ ৪০ জনকে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল কৃষিভবনে। কেন? দিল্লির দুর্দিনের ঘটনাপর্বকে নাটক বলে মনে করছে সিপিএম। রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০১৯ লোকসভা ও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে যে বাইনারি লড়াই বাংলায় হয়েছে, সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে সব থেকে ক্ষতি হবে সিপিএমের। ক্ষতি হবে কংগ্রেসেরও। তবে রাহুল-সনিয়ার সঙ্গে মমতা-অভিষেক কাছাকাছি আসায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের ব্যাপারে এখন কিছুটা হলেও দোটানায় আছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক আমলা দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি। বগটুইয়ে গণহত্যা থেকে আমতার আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যু, নদিয়ার হাঁসখালিতে গণধর্ষণ, আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। গরুপাচার-কাণ্ডে তিহারে বন্দি দোর্দণ্ডপ্রতাপ বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তথা কেষ্ট। কয়লাপাচার নিয়ে তদন্ত চলছে। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরোধীদের নানা অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল কংগ্রেস। শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তাঁর স্ত্রী, বাবা-মাকেও সমন পাঠিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে ইডি, সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যন্ত্রে পরিণত করেছে বিজেপি। এবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার সঙ্গে নিগ্রহের ইস্যুকে জোরালো করে রাস্তায় নেমে পড়েছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন- ভয়ে নাকি পালিয়েছেন তৃণমূল সাংসদরাই! অভিষেকদের দাবি উড়িয়ে বিস্ফোরক মোদীর মন্ত্রী
অভিষেক সদলবলে দিল্লিতে, তখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতাও রাজধানীতে। কৃষি দফতরের প্রতিমন্ত্রী শুভেন্দুর সঙ্গে বিকেল চারটেয় হাসিমুখে বৈঠক করেছেন। অথচ তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও দেখা-সাক্ষাতই হয়নি মন্ত্রীর। বরং তৃণমূল নেতৃত্বকে টানাহ্যাঁচড়া, চ্যাংদোলা করে পুলিশ লাইনে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। শেষমেশ কি ফের ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ২০১৯ ও ২০২১ নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে? ইন্ডিয়া জোটে না-থেকে বাংলায় পৃথক ভাবে লড়াই করলে সিপিএম ও কংগ্রেস জোট হলেও কি সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে? সেই বাইনারি পলিটিক্স নজরে রেখে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।