খাটের ওপর বসে দুই ছেলেকে কোরানের পাঠ দিচ্ছেন ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদি! আসানসোলের নুরানি মসজিদের এই ইমামের চোখে মুখে এখনও একরাশ দুঃখ, হতাশা। ২০১৮ সালে রামনবমীর দিনে মেলায় তিনি হারান তার সন্তানকে। চোখের জল চেপে রেখে এক পুত্রহারা মুসলিম 'আব্বার' গলাতে ধরা পড়ল শান্তির বাণী। তিনি বললেন, যা হয়েছে তা অতীত। এখন আর কোন ঝামেলা নেই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় ইমাম বলেন, " আগেও যা বলেছি এখনও তাই বলব। যা হয়েছে তা এখন অতীত। বর্তমানে কোন ঝামেলা নেই। মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। এবং আমি সেই সময়ে যা বলেছিলাম সেই একই কথা বলব। সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো শত্রুতা থাকা উচিত নয়। রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখার চেয়ে ভাল অনুভূতি আর কিছু হতে পারেনা'।
সালটা ২০১৮। রামনবমীর দিনে মেলায় ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদির ১৬ বছরের ছেলের মৃত্যু সংবাদ আসে। তখন তিনি শান্তির বাণী প্রচারের কাজে ব্যস্ত। ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনেও চোয়াল শক্ত করে তিনি সামনে থাকা জনতার স্রোতকে বলেছিলেন, "না কোন হিংসা নয়, এই মৃত্যুর কোন বদলা আমি চাই না, যদি কেই তা করার চেষ্টা করেন তাহলে আমি শহর, মসজিদ সব ছেড়ে চলে যাব"। সন্তান হারিয়েও আব্বা জনতাকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর থেকে বড় ধর্মীয় সৌজন্যতা আর কী'ই বা হতে পারে!
আরো পড়ুন: ই-বাইকের মাধ্যমেই পার্সেল ডেলিভারি, ইন্ডিয়া পোস্টের নয়া উদ্যোগ
গত মাসেই ছেলের হত্যার ঘটনায় দুজনকে আদালতে হাজির করানো হয়। কিন্তু আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাননি তিনি। কেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি নিজের চোখে তাদের আমার ছেলেকে মারতে দেখি নি, আর আমি যা দেখিনি তা আদালতে গিয়ে বলা মানে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ওকাজ আমার দ্বারা হবে না"।
সামনেই আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচন, আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এখন তৃনমূলে কী বলবেন? উত্তরে শান্ত গলায় তার জবাব, এই ঘটনা তার কাছে কোন ফারাক রাখে না। ২০১৮ সালে ধর্মীয় হিংসার সময় আসানসোলের সাংসদ ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর অগাধ আস্থা ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদির । তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের মানুষের জন্য ভালো কাজ করছে। তার শাসনে মানুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই এবং সবার সঙ্গে সমান আচরণ করা হচ্ছে। যখন ভাল কিছু হয় সেই ফল সকলেই ভোগ করেন'।
Read story in English