সিপিএম শূন্য, কংগ্রেস শূন্য। ২০২১ থেকে টানা এই কটাক্ষ করে চলছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন সিপিএমের কাছে বড়সড় অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু প্রকাশ্য সভায় দলে যোগদান সমর্থন করছে না দলের একটা বড় অংশ। পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনওভাবেই পার্টি স্বীকৃতি দেবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিকাংশ জেলা কমিটি। সূত্রের খবর, শুধু জয়ের দিকে লক্ষ্য নয় নির্বাচনে পরাজিত হলেও টিম স্পিরিটের দিকেই নজর এখন সিপিএমের।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে সিপিএম একটি আসনেও জয় পায়নি। সেই ধারা বজায় থেকে যায় ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেও। ২৯৪টি আসনে সিপিএম ও কংগ্রেস দুই দলের একজনেরও বিধানসভায় ঢোকার ছাড়পত্র মেলেনি। সেই থেকে কটাক্ষ জুটছে। তৃণমূল গঠিত হওয়ার পরে একেবারে শূন্য না হলেও ২০০৪ লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন লোকসভায় কটাক্ষ শুনতে হত বলে প্রতিদিন সেখানে হাজির হতেন না তৃণমূল নেত্রী। একথা তিনি নিজেই বলেছেন।
ইতিমধ্যে রাজ্যে কয়েক হাজার আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শুরু থেকে বোমাবাজি, গুলি, হিংসা চলেছে বেশ কিছু এলাকায়। সিপিএমের দাবি, সন্ত্রাসের কারণে বহু জায়গায় প্রার্থী দেওয়া যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে মনোনয়ন তুলে নিতে বাধ্য করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিডিও-রা নানা জায়গায় তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছে বলে সিপিএম নেতৃত্ব অভিযোগ করেছে। যদিও ঘাসফুল শিবির সিপিএমের দাবি মানছে না। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, মাত্র দু-চারটে বুথে অশান্তি হয়েছে।
আরও পড়ুন- রাজ্যপাল ডাকেননি, নিজেই রাজভবনে যেতে চেয়েছেন রাজীব, কেন?
সিপিএম মনে করছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই যথেষ্ঠ কঠিন। হয়তো অনেক ক্ষেত্রে জয়ের আশাও নেই। তবে নীচু তলার কর্মীদের টিম স্পিরিটের দিকে নজর রাখছে সিপিএমের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সামনের বছর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে দলীয় কর্মীদের মনোবল পরখ করে নিতে চায় দল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে কর্মীরা কতটা টিকে থাকতে পারছে সেদিকে নজর রয়েছে দলের।
বিজেপি, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতো সিপিএমও কিছু ক্ষেত্রে ঘটা করে যোগদান কর্মসূচি সংগঠিত করেছে। সাধারণত এভাবে কখনও যোগদান করায় না সিপিএম। বর্ধমান, হুগলি-সহ নানা জায়গায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে হালে পানি না পাওয়া ক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের একাংশ বিরোধীদের সঙ্গে ভিড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরাই অভিযোগ করছে পঞ্চায়েতের প্রাক্তন ক্ষমতাসীনরা সিপিএমকে সাহায্য করছে। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বও বিক্ষুব্ধ তৃণমল নেতৃত্বের প্রশংসাও করছে কোথাও কোথাও।
আরও পড়ুন- ভয়াবহ দুর্ঘটনা! চলন্ত মালগাড়ির সজোরে ধাক্কা অন্য মালগাড়িতে, হুড়মুড়িয়ে লাইনচ্যুত একাধিক বগি
সূত্রের খবর, সিপিএম দেখে নিতে চায় যাঁরা এই সময় ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের সঙ্গে ভিড়েছে তাঁরা আদৌ ভবিষ্যতে দলে থাকে কিনা। কারণ, তৃণমূল ভায়া বিজেপি হয়ে ফের তৃণমূল, সিপিএম ভায়া বিজেপি হয়ে তৃণমূল গত তিন বছরে এমন হাজার হাজার ঘটনা ঘটেছে। অন্য দল না ভাঙলে যে শক্তি বাড়বে না তাও বিলক্ষণ জানে সিপিএম নেতৃত্ব। তবু সাবধানে পা রাখতে চাইছে তাঁরা। পরিস্থিতি যা যখন তখন পা পিছলে যেতে পারে। তাই দলে যোগদান নিয়ে খুব সতর্ক সিপিএমের বড় অংশ। দেওয়াল লেখা, পোস্টারিং, মিটিং-মিছিলে অংশ নেওয়া, দলে আগতরা এসব করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। সিপিএম সূত্রে খবর, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তখন দলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।