২০১৮-এর ২০ সেপ্টেম্বর। উত্তপ্ত হয়েছিল দাড়িভিট উচ্চবিদ্যালয় চত্বর। অভিযোগ ছিল, সেদিন পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তাপস বর্মন ও রাজেশ সরকারের। তখন সিবিআই তদন্ত চেয়েছিল মৃত দুই যুবকের পরিবার। প্রায় ৫ বছর পর হাইকোর্ট এদিন রায় দিয়েছে দাড়িভিট গুলি কাণ্ডের এনআইএ তদন্তের। সেদিন শুধু গুলি চলেনি, বোমা বিষ্ফোরণও ঘটেছিল। এনআইএ সঠিক তদন্ত করলে অপরাধীরা শাস্তি পাবেই বলে জানিয়েছেন রাজেশ ও তাপসের পরিবার।
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিটে দোলনঞ্চা নদীর পাড়ে বিগত ৫ বছর ধরে সমাধিস্ত হয়ে রয়েছে তাপস ও রাজেশের মৃতদেহ। মৃতদেহ দাহ করেনি পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে পালা করে রাতে পাহাড়াও দিয়েছে গ্রামবাসীরা। যাতে মৃতদেহ কেউ সমাধি থেকে তুলে নিয়ে না যায়। অবশেষে এনআইএ তদন্তে স্বস্তি মিলেছে দুই পরিবারের। কারণ ফের ময়না তদন্ত হলে সঠিক তথ্য় বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে তাঁরা।
স্কুল সংলগ্ল দাড়িভিট বাজারেই বাড়ি নিহত তাপস বর্মনের। তাপসের মা মঞ্জু বর্মন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'এই রায়ে কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছি। এখন দোষীরা শাস্তি পেলে পুরোপুরি শান্তি পাব। সেদিন পুলিশ ভ্যান থেকে গুলি চলেছে তো পুলিশই গুলি চালিয়েছে। সিআইডি আমাদের জানিয়ে তদন্ত করেনি। আমরা জানিও না। সিআইডি কোনওদিন প্রকাশ্যে বাড়িতে আসেনি। লুকিয়ে আসতে পারে। বিচারপতি রাজকুমার মান্থার চরণে কোটি কোটি প্রণাম।' বিগত ৫ বছর পুলিশ-প্রশাসনের কেউ তাঁদের খবর রাখেনি বলে জানান মঞ্জুদেবী। তাঁর বক্তব্য, 'বরং গ্রামের ৩৫ জনের নামে কেস করেছে। কেউ কেউ জামিনে রয়েছে।'
দাড়িভিটের পাশে সুখানিভিটা গ্রামে বাড়ি রাজেশ সরকারের। স্কুলে গন্ডগোলের খবর শুনে বোনকে আনতে গিয়েছিলেন রাজেশ। বাবা নীলকমল সরকারও এনআইএ তদন্তেই ভরসা রাখছেন। সিআইডি কোনওপ্রকার তদন্তই করেনি বলে দাবি করেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নীলকমল সরকার বলেন, 'আসল অপরাধী পুলিশ। পুলিশের দুটি গাড়ি থেকে গুলি বেরিয়েছিল। পুলিশের পোষাক পরা ছিল। তবে তাঁদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। একটা বুলেট রাজেশের বুকে লেগেছিল। গোপনে ময়নাতদন্ত হয়েছে। তাতে লিখেছিল বুলেট ইনজুরি।' 'সেদিন গুলি চলেছে, বোম্ব ফেটেছে তাই এনআইএ তদন্ত দিয়েছে,' বলেন নীলকমলবাবু।
২০১৮ থেকে তাপস ও রাজেশের পরিবার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বারষ্ট্রমন্ত্রী অমতি শাহসহ বহু শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে এসেছেন তাঁরা। তাপসের বাবা বলেন, তদন্ত ঠিকমত হলে একশো শতাংশ বিচার পাবই। এনআইএ তদন্তেই সব কিছু নির্ভর করছে। সত্যটা সামনে আসুক।' এনআইএ তদন্তের রায়ে খুশি দাড়িভিটের গ্রামবাসীরাও। স্থানীয় বাসিন্দা পবন সরকার বলেন, 'এনআইএ তদন্তে প্রকৃত তথ্য় উঠে আসতে পারে। দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।'