Advertisment

গড়িয়াহাটের আগুনের পিছনে কি হকারদের কাগজ পোড়ানো?

আগুনে পোড়া বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের একাংশের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, "হকারদের কাগজ পোড়ানো থেকেই ছড়িয়েছে আগুন"। তবে বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে হকারদের একাংশ। সন্ময় নামের এক হকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "এরকম কোনও ব্যাপার নেই।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
fire, আগুন

রাত পৌনে ১টা নাগাদ আগুন লাগে। ফোটো- সৌরদীপ সামন্ত।

ফের মধ্যরাতে আগুন। শনিবার মাঝরাতে গড়িয়াহাট চত্বরে হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়। রবিবারের সকালেও সেই আগুনের রেশ থেকেছে রীতিমতো। এদিনের আগুনে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে 'ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি'। কিন্তু কীভাবে লাগল আগুন?

Advertisment

আগুনে পোড়া বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের একাংশের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, "হকারদের কাগজ পোড়ানো থেকেই ছড়িয়েছে আগুন"। ওই বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলার বাসিন্দা শুভাশিস দে। শনিবারের  আগুনে পুড়ে গিয়েছে শুভাশিসবাবুর ফ্ল্যাট। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, "বিল্ডিংয়ের নীচে রোজ হকাররা কাগজ-প্লাস্টিক পোড়ান। আমি ছোটো থেকে দেখে আসছি। বহুবার ওঁদের বারণ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ শোনেননি। কাল রাতেও ওঁরা কাগজ-প্লাস্টিক পোড়াচ্ছিলেন। হাওয়ায় সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুভাশিসের এক আত্নীয়ের গলাতেও সেই একই ক্ষোভ। তাঁর কথায়, "বহুবার বারণ করা সত্ত্বেও ওঁরা শোনেননি। আজ যা হল, এরপর থাকব কোথায়!"

অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী তথা স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, "রাত পৌনে ১টা নাগাদ আগুন লাগে। দাউদাউ করে জ্বলছিল সব। একজন মুটিয়া প্রথমে দমকলে খবর দেন। তারপর ৫-১০ মিনিটের মধ্যে দমকল আসে।"

আরও পড়ুন, রাতের অন্ধকারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড গড়িয়াহাটে

তবে বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে হকারদের একাংশ। সন্ময় নামের এক হকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "এরকম কোনও ব্যাপার নেই।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক হকারও বললেন, "এসবই মিথ্যা অভিযোগ, ভিত্তিহীন। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে"। কার্তিক বিশ্বাস নামে গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ী বললেন, "এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করে বিভ্রান্তি বাড়িয়ে লাভ নেই। গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখা হোক, তাহলেই সবটা পরিষ্কার হবে"। রাকেশ নামে আরও এক ব্যবসায়ী এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হোক আগে।’’

কী বলছে দমকল?

আগুন লাগার কারণ নিয়ে এখনও (এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত) স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি দমকল। তাঁদের বক্তব্য, "আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি।" এ প্রসঙ্গে দমকলের ডিজি জগমোহন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। ফরেন্সিক দলকে ডেকেছি আমরা। ওঁরা খতিয়ে দেখুক।’’ দোকানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কি ছিল? জবাবে দমকলের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘আমি তো সেরকম কিছু দেখিনি।’’

ছুটির দিনে সাতসকালে আগুন-আতঙ্ক চাক্ষুষ করতে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। কাউকে আবার অগ্নিকাণ্ডের মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করতেও দেখা যায়। সেই ভিড়ের মধ্যে থাকা এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, "ফুটপাথে হকাররা যেভাবে কাগজ, প্লাস্টিক রাখেন, তাতে আগামী দিনে আরও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ কেউ তো আবার রান্নাও করেন।"

হকাররা কি কাগজ পোড়ান? প্রশ্নের জবাবে কার্তিকবাবু বললেন, ''এটা তেমন কোনও বিষয় নয়। অনেকেই পুজোআর্চ্চা করে থাকেন।"

বারবার শহরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, কী বলছেন ব্যবসায়ীরা? কার্তিকবাবু বললেন, "সকলকে আরও সাবধান হতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আরও জোরালো করতে হবে।"

এদিকে, আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে 'ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি'র বহু শাড়ি-শাল। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে যেসব শাড়ি রক্ষা পেয়েছে, এখন সেগুলি উদ্ধার করে অন্যত্র সরানোর কাজ শুরু করেছেন দোকান কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সামগ্রী সরানো হয়েছে। তবে, বিয়ের মরশুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বহু শাড়ি পুড়ে যাওয়ায় মালিক থেকে কর্মচারীদের হতাশা স্পষ্ট।

অগ্নিকাণ্ডের জেরে এদিন গড়িয়াহাটের অন্য দোকানগুলির ঝাঁপ বন্ধ রয়েছে। এক ব্যবসায়ী বললেন, "এ ঘটনার পর আর কারও ইচ্ছে নেই দোকান খোলার"।

kolkata news fire
Advertisment