পঞ্চায়েত ভোটের আগে বঙ্গ রাজনীতি সরগরম। এক দিকে বোমা-গুলির রমরমা, পাশাপাশি আদিবাসী ভোটের অংকে মশগুল রাজনৈতিক দলগুলি। রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোট ব্যাংক হিসাবে মুসলিম, আদিবাসী, দলিতদের নানা ভাবে টার্গেট করে রাজনৈতিক দলগুলি। কোনও রাখঢাক নয়, তা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে থাকে রাজনীতিকরা। পঞ্চায়েত ভোট, তারপরই লোকসভা নির্বাচন, আদিবাসী ভোটারদের কাছে টানতে মরিয়া বিজেপি, তৃণমূল।
গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের আগে আদিবাসী ও দলিতদের ভোট পেতে একাধিক কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। কখনও তাঁদের বাড়িতে মধ্য়াহ্ন ভোজন সেরেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা অমিত শাহ, জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, রাজ্য় নেতারাও বাদ যাননি। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে আদিবাসী রমনীদের সঙ্গে হাতে হাত দিয়ে তালে তালে নাচ করেছেন, সেই দৃশ্যও দেখেছে বঙ্গবাসী। বীরসা মুন্ডা, সিধু কানহুদের নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করেন রাজনীতিকরা। তবে এবার রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির মন্তব্য ঘিরে উত্তাল হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। ক্ষমা চাইতে হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও। রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি, রে রে করে উঠেছেন বিজেপির ছোট থেকে বড় নেতারা। রাজ্যের আদিবাসী মন্ত্রীও এবিষয়ে একটি কথাও বলেনি। তবে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান, শ্রদ্ধা জানানো কর্তব্য বলে মনে করেন মন্ত্রী বুলু চিক বরাইক।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে ১৮টি আসনে জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গ থেকে সর্বাধিক আসন লাভ করেছিল বিজেপি। জঙ্গলমহলে কোনও আসন পায়নি তৃণমূল, উত্তরবঙ্গে কংগ্রেস একটি আসনে জয় পেয়েছিল। এই আসনগুলোর একটা বড় অংশ আদিবাসী অধ্যুষিত। বিশেষ করে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর। লোকসভায় আদিবাসী ভোটে বড় থাবা বসিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে এই সব এলাকায় কিছু ক্ষেত্রে ফের তৃণমূল নিজেদের জায়গা ফিরে পায়। সামনেই পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন, এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ বিজেপি-তৃণমূল। তাতেই ঘৃতাহুতি দিয়েছে অখিল গিরির রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কুবচন।
লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে গরু দুধ দেয় সেই গরুর লাথি খাওয়া ভাল। মুসলিম ভোটারদের বড় অংশ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের দিকে ভিড়ে ছিলেন, এই দাবি করে দুপক্ষই। মুসলিম ভোট ব্যাংকের পাল্টা আদিবাসী ও দলিত ভোট ব্যাংক তৈরি করতে কয়েকবছর ধরেই সচেষ্ট বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু সভাসমাবেশে সনাতনী চিন্তাধারা নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। বিধনসভা নির্বাচনের প্রচারে নন্দীগ্রামে হিন্দু-মুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে বিশেষ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শুভেন্দু। আদিবাসীদের ভোটও যে পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর তা সকলেই অবগত রয়েছেন।
দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হওয়ার পর আদিবাসীদের আরও কাছে পৌঁছাতে চাইছে বিজেপি। বিভিন্ন সভায় সেকথা বলছেনও বিজেপি নেতৃত্ব। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রীর রাষ্ট্রপতিকে অবমাননা করার পর তরুপের তাস হাতে পেয়ে যায় বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের আদিবাসী প্রেম নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তোলে গেরুয়া শিবির। শেষমেষ বহু বিতর্কের পর তৃণমূল নেত্রী ও খোদ অখিল গিরি ক্ষমা চেয়েছেন প্রকাশ্যে। এরাজ্যে আদিবাসী ও দলিত মিলিয়ে ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ। ভোট যে বড় বালাই।