Advertisment

ব়্যাগিং বন্ধে কি সদিচ্ছার অভাব? কী বলছেন বিশিষ্ট মনস্তত্ত্ববিদ ইন্দ্রানী সারাঙ্গী

ব়্যাগিংয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি নিজেদের দায় এড়াতে পারে? যাদবপুরের মর্মান্তিক ঘটনার পর এই প্রশ্ন উঠছে সর্বক্ষেত্রে।

author-image
Joyprakash Das
New Update
What is the psychiatrist indrani sarangi saying about Jadavpur Universitys falling death case , ব়্যাগিং বন্ধে কী সদিচ্ছার অভাব? কি বলছেন বিশিষ্ট মনস্তত্ববিদ ইন্দ্রানী সারাঙ্গী

মনস্তত্ত্ববিদ ইন্দ্রানী সারাঙ্গী।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যু, ব়্যাগিং সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেন এই ব়্যাগিং? জুনিয়র পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্যায়-অত্যাচার করে কী মজা পায় সিনিয়ররা? শুধুই কি সিনিয়র ছাত্রছাত্রীরা এই ব়্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি দায় এড়াতে পারে? যে ব়্যাগিংয়ের পরিণতি এক নিষ্পাপ ছাত্রের অকাল প্রয়াণ, সেটার কি খুব প্রয়োজন? সর্বোপরি ব়্যাগিং বন্ধের উপায় কি? প্রখ্যাত মনস্তত্ববিদ ইন্দ্রানী সারাঙ্গী সমস্ত প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে।

Advertisment

ব়্যাগিংয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি নিজেদের দায় এড়াতে পারে? যাদবপুরের মর্মান্তিক ঘটনার পর এই প্রশ্ন উঠছে সর্বক্ষেত্রে। এখনও পর্যন্ত ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন দাবি করছে, প্রশাসনিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার। মনস্তত্ববিদ ইন্দ্রানী সারাঙ্গী বলেন, 'কর্তৃপক্ষ কিছুতেই তার দায় এড়াতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করেই অভিভাবকরা সেখানে পড়তে পাঠিয়েছে। তাঁদের ঠিক ভাবে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এখানে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, হস্টেল সুপার-সহ প্রশাসনিক ব্যক্তিরা রয়েছেন, তাঁদের এগুলো দেখা দরকার। আমাকে এমন জায়গায় গিয়ে থাকতে বলা হচ্ছে, যেখানে আমার থেকে ৫-৬ বছরের বড় প্রাক্তন ছাত্ররা থাকছে। শুধু তাই না, প্রাক্তন ছাত্র আবার হস্টেলের দায়িত্বে রয়েছে।'

ব়্যাগিংয়ের কথা মাথায় আসে কেন? ইন্দ্রানী সারাঙ্গীর কথায়, 'আরেক জনকে আত্যাচার করার কথা তখনই মাথায় আসে যখন তাঁর ওপর সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষমতা-কায়েম করার চেষ্টা করছি। সে যখন কষ্ট পাচ্ছে তখন স্যাটিসফায়েড হচ্ছি। এখান থেকে আমার গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে। আমি কোনও দিন গুরুত্ব পাইনি। আজকে আমি বড় হয়ে গিয়েছি। আমার কোনও গুরুত্ব নেই, সেই গুরুত্ব অনুভব করার সব থেকে ভাল জায়গা হল ভয় দেখিয়ে অপরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। অন্যকে কষ্ট দিয়ে কোথাও আমার অনুভূতি হচ্ছে, আমি ক্ষমতা ফুল ফিল করছি। এর বাইরে আমার কিছু নেই।'

ব়্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু হলেও নাকি আবেগ অনুভূতি থাকছে না। কী বলবেন? ইন্দ্রানী সারাঙ্গীর কথায়, 'এটা তো একদিনে হয় না। আবেগ অনুভূতি চেপে রাখে। এটা করতে করতে অভ্যাস হয়ে যায়। তার জন্য কারও মৃত্যু হলেও নির্লিপ্ত থেকে যায়! কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি? নৃশংসতা কী স্তরে চলে গেলে আবেগের জায়গা থাকে না! ইন্টিলিজেন্স বেশি বলে গুছিয়ে অন্যায় করতে পারি? বিনা কারণে নগ্ন হয়ে আত্মহত্যা করবে, এটা সম্ভব নয়।'

এমনও বলতে শোনা যায়, ব়্যাগিংয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে। কখনও বলা হয়, এতে বন্ধুত্ব বাড়ে। আবার কখনও আওড়ানো হয়, স্মার্টনেস বাড়ে। ইন্দ্রানীর কথায়, 'ব়্যাগিং করলে দু'জনের মধ্যে বন্ধুত্ব ভালো হয়? ছোট থেকে বেস্ট ফ্রেন্ডশিপ কি ব়্যাগিংয়ের মাধ্যমে হয়? সম্পর্ক তৈরি করার জন্য ব়্যাগিং দরকার নেই। কোথাও আমরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এই সমস্ত কথাবার্তা বলি।'

কীভাবে ব়্যাগিং আটকানো যেতে পারে? ইন্দ্রানী সারাঙ্গী বলেন, 'আমি শুনে থাকি, পার্টিকুলার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব়্যাগিং হয়। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হস্টেল আলাদা। স্টুডেন্টদের সবসময় ফর্মাল ড্রেস পরে থাকতে হবে। তাঁদের ওপর নজর রাখার জন্য করা হয় এই ব্যবস্থা। আলাদা করে রাখা হলেও ব়্যাগিং যে একেবারে হবে না, তা নয়। তবে সময়টা খুব কম। কারণ আলাদা হস্টেল হলে সন্ধে ৭টার মধ্যে ঢুকতে হবে। যেহেতু তারা ব়্যাগিং ফেস করছে না, তাদের মধ্যে আগ্রাসনটা তৈরি হচ্ছে না। অন্য কারও ওপর অত্যাচারটা করতে পারলে শান্তি পাব, সেই মানসিকতা তৈরি হবে না। পরপর ২-৩ বছর এভাবে আটকে দিতে পারলে ব়্যাগিং ঠিক কমে যাবে। ঝগড়াঝাঁটি, মাথা নীচে, পা ওপরে হতে পারে। নগ্ন অবস্থায় পড়ে যাওয়া এটা হয়তো হবে না।'

ব়্যাগিং নিয়ে প্রশাসনিক কর্তা, অধ্যাপকদের একাংশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। যাদবপুরের ক্ষেত্রেও সেই একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। ক্লাসে, সভায় সমাজ গড়ার ভাষণ দেন। অথচ, তাঁদের মুখ বন্ধ থাকে এই সব ঘটনায়। কেন পিছিয়ে যান এই শ্রেণির মানুষজন? বিশিষ্ট মনস্তত্ববিদ বলেন, 'সবারই ছেলে, মেয়ে পরিবার নিয়ে সংসার। তাঁরা আওয়াজ তুললে সমস্যা হবে। এখানে থাকতে পারবেন না। সরিয়ে দেবে। তাই অনেকে চুপ থাকেন। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করলে ফল মেলে না। বরং, তিনিই টার্গেট হয়ে যান। প্রতিবাদ করলেই নিজের বিপদ। কেউ ঝামেলায় পড়তে চায় না। নিজে ও নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখার জন্য মাইনে পাচ্ছি, সংসার চলছে, কী দরকার!'

'ব়্যাগিং বন্ধে প্রথমত কড়া শাস্তি প্রয়োজন। পাশাপাশি দু-চার বছর আলাদা রাখা দরকার প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের।' মনে করেন এই মনোবিদ। ইন্দ্রানী সারাঙ্গী বলেন, 'ভাল পড়ুয়ারা যেখান থেকে পড়বে, সেখান থেকেই দাঁড়িয়ে যাবে। বাকি এভারেজরা যাদবপুরে না পড়লেও হবে। এখানে পড়ে বড়জোর সাড়ে তিন থেকে চার হচ্ছে। একটু উন্নতি। তবে যেখানে প্রাণের ভয় আছে, সেখানে চারের থেকে তিন ভালো। অন্যায়কে বন্ধ করার চেষ্টা না-করলে অন্যায় থেকে যাবেই। বন্ধ হবে না।' স্পষ্ট ভাবেই বললেন ইন্দ্রানী সারাঙ্গী।

kolkata news swapnadeep kundu Jadavpur University
Advertisment