কুড়মিদের সঙ্গে মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভায় কুড়মিদের সমস্যা সমাধানে তিনি আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি অবরোধ আন্দোলন না করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা কথা দিয়েছে ঘেরাও আন্দোলন করবে না, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কুড়মিদের আবেদন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছি বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে এখনই খুশি হতে চায় না কুড়মিরা। তাঁরা মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত করার পথে অবিচল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাত বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এখনই খুশি হওয়ার ব্যাপার নেই। খুশি তখনই হব যখন আমাদের কাজটা হবে। আমরা আশাবাদী এটুকু বলতে পারি।' মুখ্যমন্ত্রী তো অবরোধ আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কি করবেন? রাজেশ বলেন, 'অবরোধ আন্দোলনে আমরা এই মুহূর্তে যাচ্ছি না। তবে আন্দোলনের রূপরেখা কি হবে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেব। এখন অপেক্ষা করব।'
কুড়মিরা তপসিলি জাতি সহ বেশ কয়েকটি দাবিতে এর আগে রেল ও সড়ক অবরোধ করেছে। ঘাঘর ঘেরা আন্দোলনও সংগঠিত করেছে জঙ্গলমহলের চার জেলায়। তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ঘেরাও করে তাঁদের কাছে দাবি-দাওয়া জানিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলে নবজোয়ার যাত্রা করতে গিয়ে বড় ধরনের গন্ডগোলের মুখে পড়েছিলেন। অভিষেকের কনভয়ে হামলা করার অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাতসহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিছু দিন আগে মুক্তি পেয়েছেন রাজেশ মাহাত।
নিজেদের দাবি-দাওয়া থেকে সরে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই কুড়মিদের। রাজেশ মাহাত বলেন, 'সদ্য জেল থেকে বের হলাম। আমরা মামলা মোকর্দমায় জর্জরিত। আদালতে হাজিরা দিতে আমাদের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আমরা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, মামলা-মোকর্দ্দমা নিয়ে কিছু বলিনি। এগুলো ছোটোখাটো বিষয়। মূল্য লক্ষ্যে আমরা অবিচল।'
পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কুড়মিদের মধ্যে দ্বিমত ছিল। এরইমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় কুড়মিরা নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করেছে। তাঁদের অনেকে জয় পেয়েছে। রাজেশ বলেন, 'পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। কোনও প্রস্তুতি ছিল না। আমাদের গ্রেফতারের পরে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গেল। মানুষের মনে ক্ষোভ ছিল। তাঁরা ভেবেছিল কাউকে ভোট দেবে না। ওই জায়গা থেকে লোক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।' এই কুড়মি নেতার দাবি, 'জঙ্গলমহলের চার জেলায় ১৩৯টা গ্রাম পঞ্চায়েত আমার নির্ণায়কের ভূমিকায়। বেশ কিছু পঞ্চায়েত আমরা দখল করেছি।' তবে কুড়মিদের তপসিলি উপজাতি করার দাবির বিরোধিতা করছে আদিবাসি সংগঠনের নেতৃত্ব।