Advertisment

বাংলার মন পড়তে পথে অভিষেক, ধনুকভাঙা পণে তুফানি জনসংযোগ! 'বাড়তি সুবিধা' পাবে তৃণমূল?

২৪ এপ্রিল কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে যাত্রা শুরু করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

author-image
Joyprakash Das
New Update
what tmc will gain from Abhishek's public relations program

'তৃণমূলে নবজোয়ার' কর্মসূচিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংযোগের যাত্রা পথেই পূর্ব বর্ধমানে থাকাকালীন কর্নাটকে কংগ্রেসের কাছে বিজেপির বিধ্বস্ত হওয়ার খবরে সর্বভারতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। বঙ্গ কংগ্রেসের উৎসাহ, উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে। কর্নাটকে বিজেপির পরাজয় নিয়ে মমতা-অভিষেক সুর চড়ালেও কংগ্রেস নিয়ে কোনও উচ্চ-বাচ্য নেই। পাছে এরাজ্যে অধীর চৌধুরীরা অক্সিজেন পেয়ে যায়! তবে অভিষেকের সফর চলাকালীন মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমে ফের কংগ্রেসে ফিরে যাওয়ার কিছু খবর মিলেছে। এটাও কিন্তু তৃণমূলের শাসনকালে একটা নয়া অধ্যায়। এর আগে ছিল শুধুই তৃণমূল ও বিজেপিতে যোগের ঢল।

Advertisment

অভিষেকের বঙ্গ সফর ২০ দিন অতিক্রান্ত। ২৪ এপ্রিল কোচবিহারে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ২৫ এপ্রিল জনসংযোগ যাত্রার প্রথম জনসভা করেন কোচবিহারের প্রথম হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ময়দানে। সেই যাত্রা এখন পূর্ব বর্ধমান জেলায়। প্রথম ১৭ দিনে ২০০০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এর মধ্যে ৫০টি জনসভা, ১২টি রোড শো, ৩৫টি বিশেষ অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। তবে এই জনসংযোগ যাত্রার মূল আকর্ষণ ব্যালটে ভোটের মাধ্যমে তৃণমূলের প্রার্থী নির্বাচন।

publive-image
'তৃণমূলে নবজোয়ার' কর্মসূচিতে এক লোকশিল্পীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক ঘোষণা করেছেন, নবজোয়ারে জনগণই ভোট দিয়ে তাঁদের প্রার্থী ঠিক করবে। তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত এই নির্বাচনে ইতিমধ্যে নানা জায়গায় গন্ডগোলের চিত্র ধরা পড়েছে। মারধর থেকে ব্যালট ছিনতাই, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে। এমনকী পুলিশকে ধাক্কা দিচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা সেই দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। পঞ্চায়েত দখলে রাখতে গেলে এই ব্যালটে জয়ী হওয়া যে খুব জরুরি! পঞ্চায়েতের ড্যামি-ভোটে তাই তৃণমূলের সব পক্ষই খুবই সিরিয়াস। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে প্রতিটি জেলায়। অভিষেক ঘোষণা করেছেন, অবাধ ও শান্তিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে, কোনও গন্ডগোল বা ভোট লুঠ হবে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে কি হতে পারে তাঁর রূপরেখা এই ড্যামি নির্বাচনেই টের পাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। নিজেদের নির্বাচনে মহড়া চলছে, সেখানে তো বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম থাকবে।

উত্তরবঙ্গ শব্দে আপত্তি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের সমস্ত লোকসভা আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস বিপর্যস্ত হয়েছিল। বড় জয় পেয়েছিল বিজেপি। এই অঞ্চলের ৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ৭, শুধু মালদহে একটি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। বিগত কয়েক মাস ধরেই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির দিকে নজর দিয়েছেন অভিষেক।

publive-image
রোড শোয়ের মাঝেই কথা পথচলতি মানুষের সঙ্গে।

অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রা নিয়ে বিরোধীরা নানা প্রশ্ন তুলছে। প্রথমত, অভিষেকের পুলিশি নিরাপত্তা কি সরকারি খরচে হচ্ছে না তৃণমূল যোগান দিচ্ছে? কত খরচ হচ্ছে? পাশাপাশি যে ভাবে টেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে রাতে থাকার জন্য সেই এলাহি ব্যবস্থা নিয়েও নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এছাড়া ড্যামি নির্বাচনের অশান্তি নিয়ে সরব বিরোধীরা। তবে এসব বিষয়কে কোনও পাত্তাই দিচ্ছেন না অভিষেক।

আরও পড়ুন- কর্ণাটকে বিজেপির হারে কটাক্ষের বন্যা অভিষেকের, ‘চুপ করাতে’ ‘মোক্ষম’ জবাব গেরুয়ার

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও আদি-নব্য তৃণমূলের বিরোধী প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। প্রবীণরা গুরুত্ব হারানোর ভয়ে বারে বারে গলা ছেড়েছে। অভিজ্ঞদের অনেককেই প্রকাশ্যে বলতে শোনা গিয়েছে তাঁদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া অন্য কেউ নয়। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল মমতাময়ের পর এই বঙ্গ যাত্রা বুঝিয়ে দিয়েছে এবার তৃণমূল অভিষেকময়। মাঝে অন্য কোনও অধ্য়ায় ছিল না, থাকবেও না।

পাশাপাশি, এই প্রথম সরাসরি টানা দু'মাস কোচবিহার থেকে সাগর যাত্রায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও কর্মীদের সঙ্গে জনসংযোগ করছেন অভিষেক। পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে আগে কিছুটা হলেও তাঁর রাজনৈতিক ভিত শক্ত করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। তবে নির্বাচনের ফলেই বোঝা যাবে জনসংযোগ যাত্রার ক্যারিশ্মা।

abhishek banerjee West Bengal panchayat election tmc Mamata Banerjee
Advertisment