বিগত কিছু দিন ধরেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে হইচই শুরু হয়েছে। খোদ কলকাতায় এমন সাইবার জালিয়াতির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এবার আর এটিম থেকে নয়, অ্যাকাউন্ট হ্যক নয় বা কায়দা করে ওটিপি জেনে নিয়েও জালিয়াতি নয়। আপনাকে আঁধারে রেখে আধার কার্ড ও আপনার আঙুলের ছাপ নিয়েই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব করে দিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। যা আধার এনেবল পেমেন্ট সিস্টেম বা এইপিএস (AEPS) নামে পরিচিত। এই লেনদেনের সঙ্গে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের এখনও কোনও পরিচয়ই ঘটেনি। তার আগেই ময়দানে নেমে পড়েছে সাইবার দুষ্কৃতীরা।
এ বিষয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তর সঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। কীভাবে দুষ্কৃতীরা অপরাধ চক্র সংগঠিত করছে? সেকথা যেমন জানিয়েছেন তিনি, পাশাপাশি সাইবার জালিয়াতি থেকে বাঁচার উপায় বলেছেন সন্দীপ সেনগুপ্ত।
এইপিএস-কে (AEPS)ব্যবহার করে কীভাবে জালিয়াতি?
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত'র কথায়, 'আধার এনেবল পেমেন্ট সিস্টেম (AEPS) একটা নতুন উপায়। যেখানে ব্যাংক থেকে ১০ হাজার টাকা অবধি তোলা যায়। শুধু আধার কার্ড ও থাম্ব ইম্প্রেশন ব্যবহার করে এই টাকা তোলা যায়। এটা সরকার একটা নতুন উপায় করেছে যাতে মানুষের সুবিধা হয়। কিন্তু মানুষ এটাকে ব্যবহার করার আগেই দুষ্কৃতীরা তার ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমারা সরকারি পরিচয়পত্র হিসাবে আধার কার্ড দিয়ে দিই। যেটা একেবারে উচিত নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আধার কার্ড চাইতে পারে না বা দিতেও বাধ্য নই। আধার কার্ড ও থাম্ব ইম্প্রেশন সংগ্রহ করে তা দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে অপরাধীরা। কলকাতায় প্রচুর মানুষের ১০ হাজার টাকা বেরিয়ে গিয়েছে। প্রপারটি ডকুমেন্ট, দলিল বা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের থাম্ব ইম্প্রেশন আছে। সেখান থেকে এগুলো কালেক্ট করা হচ্ছে। এটাকে তো বন্ধ করা যাবে না।'
কীভাবে রুখবেন এই সাইবার অপরাধ?
সন্দীপ সেনগুপ্ত'র পরামর্শ, 'প্লে স্টোরে গিয়ে এম আধার অর্থাৎ মাই আধার অ্যাপস ইনস্টল করে সেখানে আধার কার্ড রেজিস্ট্রার করে বায়োমেট্রিক লক চালু করতে পারি। অর্থাৎ নিস্ক্রিয় করে দিতে পারি। আধার কার্ড লক করে দিলে এই দুর্নীতি করাটা কঠিন হয়ে যাবে। আবার আধারকার্ড যখন দরকার পড়বে তখন আনলক করব। যখন লাগবে না তখন আমরা লক করে দেব। আমরা এটা করতে পারলে এই ধরণের জালিয়াতি বন্ধ করা যায়। সবাই এম আধার ডাউনলোড করুন। সেখানে বায়োমেট্রিক লক করে দিন। সেখানে ভিআইডি অর্থাৎ ভার্চুয়াল আইডি ডিজেবল করে দিন। তাহলে এই চুরি কমে যাবে।' নিজেদের টাকার নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের এই কাজ করতে হবে।
তাহলে কি ব্যাংক বা সরকারের কোনও দায় নেই?
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তর মতে, 'সরকার ও ব্যাংকের দায় নেওয়া উচিত। সরকার আধার ও ব্যাংকের লিংক করতে বলছে। যতগুলি ফিচার দিচ্ছে তা বাইডিফল্ট অফ রাখা উচিত। অন করে ফিচার ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা উচিত। এই সচেতনতা না থাকলে দুষ্কৃতীরা ব্যবহার করবে।'
সতর্ক হোন
দুষ্কৃতীরা নানা ভাবেই তো আধারকার্ড ও আঙুলের ছাপ জোগার করে ফেলবে। কেউ তো ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হতে চলেছে। সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, 'তিনটে কেস প্রথম দেখেছিলাম। প্রপারটি ডকুমেন্ট থেকে ফিংগার প্রিন্ট তোলা শুরু করে। জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট কেনাবেচায় ফিংগার প্রিন্ট প্রয়োজন। মোবাইলের সিম তোলার সময় ফিংগার প্রিন্ট দিতে হয়। তাছাড়া নানা জায়গায় এমন ব্যবস্থা আছে। আতঙ্ক তো এখানে যে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাপ-গ্লাসও ধরলেও সেখান থেকেও ফিংগার প্রিন্ট নিয়ে নিতে পারে। এই পাসওয়ার্ড তো বদলাতে পারব না।'