scorecardresearch

‘সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, মা দায়ী নন’, একমাত্র মেয়ের বিয়েতে সচেতনতার পাঠ শিক্ষকের

বিয়েবাড়ির মূল ফটকে লাগানো ছিল একটি পোস্টার। সেই পোস্টারে উপহার সামগ্রী নিয়ে বিয়েবাড়িতে ঢোকায় ছিল ‘নিষেধাজ্ঞা’।

Whether the child is a son or a daughter, the mother is not responsible for it, awarness campaign by retired school teacher
মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্যামাপ্রসাদ দাস। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

একমাত্র কন্যা অদিতির বিয়ের আয়োজনে কোনও খামতি রাখেননি বাবা। ফুল,মালা ও আলোর রোশনাইয়ে নিখুঁত ভাবে সাজানো হয়েছিল বিয়েবাড়ি। বৃহস্পতিবার দিনভর বিয়েবাড়ি ভরে ছিল সানাইয়ের সুরের মূর্ছনায়। এত কিছুর ফাঁকেও বিয়েবাড়ির উপরি পাওনা পাত্রীর শিক্ষক বাবার সচেতনতার পাঠ-দান।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক শ্যামাপ্রসাদ দাস। মেয়ের বিয়েতে সচেতনতার পাঠ দিয়ে অভিনবত্ব এনেছেন এই শিক্ষক। বিয়ে বাড়িতেই লাগানো হয়েছিল কন্যা সন্তান নিয়ে ব্যাখ্যা। টাঙানো ফ্লেক্সে লেখা, ‘সন্তান হোক পুত্র বা কন্যা- মাতা কোনওভাবেই দায়ী না।’

নিজের মেয়ের বিয়েতে শুধু এই বার্তা দিয়েই থেমে থাকেননি শ্যামাপ্রসাদবাবু। বিয়েবাড়ির মূল ফটকে পোস্টার লাগিয়ে দিয়ে উপহার সামগ্রী নিয়ে ঢোকাতেও ছিল ‘নিষেধাজ্ঞা’। ছোট থেকেই পারিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা তেমন একটা ছিল না। প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই জীবন-যুদ্ধে এগিয়ে চলেন শ্যামাপ্রসাদ দাস। মেধাবী ছাত্র শ্যামাপ্রসাদের বিজ্ঞান নিয়ে পড়ায় আগ্রহ ছিল। পরবর্তী সময়ে সাফল্যের সঙ্গেই স্নাতক উত্তীর্ণ হন বিজ্ঞান বিষয় নিয়েই। পরে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান। এরপরে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরে।

বিয়েবাড়িতে কন্যা সন্তান নিয়ে সচেতনতার পাঠ। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

তবে শ্যামাপ্রসাদবাবুর জীবনে বড় অঘটনটি ঘটে যায় কয়েক বছর আগে। দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শ্যামাপ্রসাদবাবুর স্ত্রী কাকলীদেবী। তখন তাঁর একমাত্র কন্যা অদিতি অনেক ছোট। মা-বাবা দু’জনের দায়িত্ব পালন করেই বড় করেছেন আদরের মেয়েকে। বাবার বিজ্ঞান প্রেমে অনুপ্রাণিত কন্যা অদিতিও সম্প্রতি কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিএস সি পাশ করেছেন।

এরই মধ্যে অদিতির সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে মালদহের মথুরাপুরের বাসিন্দা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার যুবক স্বর্ণাঙ্কু সাহার। মেয়ের পছন্দের পাত্রকেই নিজের জামাই করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শ্যামাপ্রসাদবাবুও। একমাত্র কন্যার বিয়ের দিনেই কেন বিয়েবাড়িতে কন্যা সন্তান জন্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরলেন বৃদ্ধ?

বিয়ের পর নবদম্পতি।

আরও পড়ুন- হঠাৎ হঠাৎ-ই পুড়ে যাচ্ছে পোশাক, রহস্যকাণ্ডে ভূত-আতঙ্ক চরমে

এর উত্তরে শ্যামাপ্রসাদবাবু বললেন, ”বিজ্ঞানভিত্তিক কি কারণে পুত্র বা কন্যা জন্মায় তা বহু মানুষের কাছেই আজও অজানা হয়ে রয়েছে। তাই আজকের যুগেও বহু মানুষ মনে করেন কন্যা সন্তান জন্মানোর দায় শুধুই মায়ের। তাই কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় অনেক মাকেই নির্যাতন অবধি সহ্য করতে হয় আজও। অথচ বিজ্ঞান বলছে, সন্তান পুত্র হোক বা কন্যা – তার জন্য মা কোনওভাবেই দায়ী নন।’ এই ভাবনা থেকেই নিজের মেয়ের বিয়েতে অভিনব এই পরিকল্পনা করেন বৃদ্ধ।

এদিকে, শ্বশুরমশাই শ্যামাপ্রসাদ দাসের এই কীর্তিতে খুশি তাঁর জামাই পেশায় ইঞ্জিনিয়র স্বর্ণাঙ্কু সাহাও। আজও
বহু মানুষের এই ভুল ধারণা ভাঙতে তাঁর শ্বশুরমশাই যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন যুবক। স্বর্ণাঙ্কু জানিয়েছেন, বৌভাতের দিনেও তিনি তাঁর মালদহের বাড়িতে অতিথিদের একই পাঠ দেবেন।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Whether the child is a son or a daughter the mother is not responsible for it awarness campaign by retired school teacher