মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের বিপুল জয়ে ওই জোটের নেতৃত্ব আশার আলো দেখেছিলেন। বিধানসভায় শূন্য! সেই অপবাদ ঘুচেছিল কংগ্রেসের। বামেরাও জয়ের সঙ্গী ছিল বলে সাফল্যে ভাগ বসিয়েছিল। কিন্তু কালক্রমে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট গঠন হতেই হাওয়া বদলাতে থাকে। লোকসভা নির্বাচনে আসনের খেলায় তৃণমূল ও কংগ্রেস একে অপরকে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তবে কাকে কার বেশি প্রয়োজন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এরাজ্যে ২০১৯ লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের জুটেছিল ২২টি আসন। এবার কি সেই আসন সংখ্যা বাড়াতে পারবে ঘাসফুল শিবির? কীভাবে তা হতে পারে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র আঙ্কিকভাবে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভায় আসন বৃদ্ধি করতে হলে তৃণমূলের কংগ্রেসের হাত ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। হাতে হাত মেলালে এখানে ফায়দা পেতে পারে তৃণমূল। তবে রাজনীতিতে নিশ্চিয়তা কিছু নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া কোথাও আসন পাবে না। প্রবল বিজেপি হাওয়া থাকলেও তৃণমূল একা লড়াই করেও এখানে ১৮-২০টা আসন পাবে। এরকম হবে না। রাজনীতিতে পুরোপুরি নিশ্চয়তা না থাকলেও এমন ফলাফল হবে বলেই মনে করছি। তৃণমূল যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাধে তাহলে দেখা গিয়েছে হাত শিবিরের ভোট পুরোপুরি তৃণমূলে যায়।'
আরও পড়ুন- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নকল সেনা’, পুলিশের জালে মূল অভিযুক্ত
২০১৯ লোকসভা ভোটে মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে একটি করে মোট দুটি আসন পেয়েছিল সোনিয়া-রাহুলের দল। বিধানসভার শূন্য লজ্জা থেকে রক্ষা করার চেষ্টাও করেছে নবাবের জেলাই। যদিও জয়ের কিছু দিন পরেই কংগ্রেস বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দেন। আবার সদ্য সমাপ্ত গ্রাম পঞ্চায়ত ভোটেও তৃণমূলকে এই দুই জেলায় প্রবল লড়াইয়ে ফেলেছে কংগ্রেস। একাধিক পঞ্চায়েত দখলও করেছেন অধীর চৌধুরীরা। এই দুই জেলায় সাংগঠনিক শক্তি আছে কংগ্রেসের। রাজ্যের বাকি জেলায় অত্যন্ত দুর্বল কংগ্রেস, তবে ৪-৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। তাহলে তৃণমূলের অঙ্ক কী হতে পারে?
শুভময় মৈত্র বলেন, 'কংগ্রেসের শক্তি রয়েছে মালদা ও মুর্শিদাবাদে। রাজ্যে বাকি অংশে ৪-৫ শতাংশ ভোট রয়েছে এই দলের। এই ৪-৫ শতাংশ ভোটও লোকসভা নির্বাচনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। মালদা-মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসকে ৪-৫টা আসন ছেড়ে দিলেও তৃণমূলের ভাল লাভ হবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সুতরাং তৃণমূল সবসময় কংগ্রেসের দিকে হাত বাড়িয়ে রাখবে। পাশাপাশি কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গে কিছু আর করার নেই। তাদের তৃণমূলের প্রয়োজন। দুজনের অপটিমাইজেশন ক্রাইটেরিয়ায় কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও তৃণমূলের একসঙ্গে লড়াইটা যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।' শুভময়বাবুর অভিমত, 'আঙ্কিক ভাবে দেখলে আসন বাড়াতে গেলে তৃণমূলকে এটাই করতে হবে।'
আরও পড়ুন- আজ পুজোর কেনাকাটার প্ল্যান? ছুটির দিনেও তুমুল বৃষ্টির জোরালো আপডেট
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বিজেপি ১৮টি আসনে জয় পেয়েছিল। তৃণমূল জয়লাভ করেছিল ২২টি আসনে। কংগ্রেসের জুটেছিল ২টি আসন। বামেরা কোনও আসন পায়নি। এবার বঙ্গে বিজেপির টার্গেট ৩৫টি আসন। যেহেতু গত ভোটে একলাফে ২ থেকে ১৮ হয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, স্বভাবতই ২০২৪-এ এই খিদে বাড়তে বাধ্য। এদিকে মোদী বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোট কৌশল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।