ব্যারাকপুরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজন অপরাধীও ধরা পড়েনি। এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে বিদ্রোহ একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কেন বিদ্রোহী হচ্ছেন তৃণমূল ফিরে আসা বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং? তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। সামনেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন হাতছানি দিচ্ছে। তার আগে অর্জুনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ অন্য মাত্রা নিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়ে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হন ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং। ভাটপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক অবশ্য বেশি দিন গেরুয়া শিবিরে স্থায়ী ছিলেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের হাত ধরে ফিরে যেন পুরনো দলে। দেখা যায়, তৃণমূল ফিরলেও তাঁর এলাকায় সেই পুরনো দাপট উধাও হয়ে যায়। বরং জেলায় ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকেন অর্জুন সিং। এদিকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুন হওয়ার পর দুর্গাপুরে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান অর্জুন। এবার একেবারে ব্যারাকপুরের খুন নিয়ে শাসক রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে দুষ্কৃতীদের মাথায় হাতের অভিযোগ তুলছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। রাজ্যের পুলিশকে নিষ্ক্রিয় বলছেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা অর্জুন। কিন্তু কেন এমন মন্তব্য করে চলেছেন অর্জুন? কি চাইছেন তিনি?
রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলে ফিরে অর্জুন আশা করেছিলেন ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলায় দলে বড় দায়িত্ব পাবেন। দলের মেইন স্ট্রিমে থাকবেন। মন্ত্রী পার্থ ভোমিক, সোমনাথ শ্যাম, সুবোধ অধিকারী, মঞ্জু বসুদের মতো স্থানীয় বিধায়ক ও তৃণমূল নেতৃত্বের বড় অংশের কোনও অনুষ্ঠানে অর্জুন সিংকে দেখা যাচ্ছে না। একটা সময়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের জুটমিলে একটা গাছের পাতা নড়তেও অর্জুনের অনুমতি লাগত, সেখানেও তাঁর কোনও কথা কেউ মানছে না। শিল্পাঞ্চলে কান পাতলে আরও শোনা যাচ্ছে, জুটমিলগুলিতেও অর্জুন বিরোধী গোষ্ঠী সক্রিয়। উল্লেখ্য, এই জুট নিয়ে বিদ্রোহ করে বিজেপি ছেড়ে আসার পথ তৈরি করেছিলেন বিজেপি সাংসদ।
আরও পড়ুন- ‘আর কতদিন ওকে কোলে নিয়ে ঘুরবেন মমতা ব্যানার্জি?’ দিলীপের নিশানায় অভিষেক
তৃণমূলে এসেও সেভাবে দলের মেইন স্ট্রিম অধরাই থেকে যেতে থাকে সাংসদের। জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে অর্জুন সিং দলে ব্রাত্যদের নিয়ে নিজের মতো সমান্তরাল গোষ্ঠী তৈরি করেন। ওই গোষ্ঠীতে টিটাগড়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরী, ভাটপাড়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান গোপাল রাউতরা অর্জুনকে সঙ্গ দেয়। জেলা তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, অর্জুনের সঙ্গে ঘুরলেও কম-বেশি ব্ল্যাক লিষ্টেড হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। দলে আসার পর যত দিন যাচ্ছে তত গুরুত্ব কম কমেছে অর্জুনের, মনে করছে তৃণমূলের একাংশ।
অর্জুনের বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ স্পষ্ট বলেছেন, অর্জুন সিংয়ের মন্তব্য অবাঞ্ছিত ও দুভার্গ্যজনক। দল যে অর্জুন সিংয়ের মন্তব্যকে বাঁকা চোখে দেখছে তা পরিস্কার ঘোষণা করেছে। এদিকে অর্জুন-পুত্র পবন সিং ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক। বাবা তৃণমূলে ফিরে এলেও পবন কিন্তু বিজেপিতেই থেকে গিয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সামেনই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন, সেক্ষেত্রে দলের প্রার্থী নিয়েও কি বিরোধ থেকে যাবে? দলে এত বিরোধের মধ্যে ২০২৪-এ লোকসভার টিকিট পেলেও অর্জুনের দিল্লি যাত্রার লড়াই কি খুব সহজ হবে? না অন্য কোনও কৌশল নিয়েছেন অর্জুন? অভিজ্ঞ মহলের পর্যবেক্ষণ, গাড়ি ব্যাক গিয়ারের আগে আগে-পিছে তো দেখে নিতেই হয়।