আন্তর্জাতিক বোমা(আইইডি) তৈরির কারখানার পর এবার আন্তর্জাতিক মাদক তৈরির কারখানা। অপরাধীরা কেন বর্ধমান শহরকেই বেছে নিচ্ছে? সেই প্রশ্নই উঠছে সর্বত্র। দুটি ক্ষেত্রেই বর্ধমানের একেবারে ঘন জনবসতির মধ্যেই এই আন্তর্জাতিক অপরাধীরা ডেরা করেছে। খাগড়াগড়ের ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। জানা গিয়েছে এক্ষেত্রে বর্ধমান শহরের বাড়িটি কিনেছিল মাদক কারবারে যুক্ত বাবা-ছেলে। স্থানীয়রা কেউই কি এদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না? নাকি পুলিশের গোয়েন্দারাও কিছু টের পাননি?
খাগড়াগড়ের ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ৮ বছর আগে। ২০১৪-এর ২ অক্টোবর দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন। সেই তদন্তে অনেক দাগী জঙ্গিকে পরবর্তীতে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। আদালতে দোষী প্রমানিত হয়েছে, অপরাধীরা সাজাও খাটছে। কিন্তু স্থানীয় স্তরে গাফিলতি, স্থানীয় সাহায্যকারী, কারও টিকি ছোঁয়া যায়নি। এবারের ঘটনাও একেবারে শহরের মধ্যিখানে। বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের কাছে গ্লাস ফ্যাক্টরি এলাকায়। ছিমছাম সভ্রান্ত এলাকা বেছে নিয়েছিল বাবা-ছেলে। এই পাড়াতেই বাড়ি কিনে ডেরা বেঁধেছিল বাবর মন্ডল ও রাহুল মন্ডল। তদন্তকারীদের মতে, এমন পাড়ায় বাড়ি কিনেছিল যাতে সহজে মানুষের নজর এড়ানো যায়। এদের আদি বাড়ি মঙ্গলকোটে, ঘটনাচক্রে খাগড়গড় কান্ডের ক্ষেত্রেও অন্যতম পান্ডার বাড়িও ছিল মঙ্গলকোটেই।
শহর উপকন্ঠ পাল্লা-শ্রীরামপুর ও বর্ধমান শহর। এই দুটি জায়গাই ছিল হেরোইন কারবারিদের ডেরা। বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজের কাছে গ্লাস ফ্যাক্টরি এলাকায় বাবর মন্ডল ও রাহুল মন্ডল থাকত। এই বাড়ি মোড়া রয়েছে সিসিটিভি দিয়ে। সিসিটিভি দিয়ে তারা নজরদারি চালাত। স্থানীয়দের মতে, এই এলাকায় এমন কোনও ঘটনা নেই যে সেখানে সিসিটিভি বসাতে হবে। নিজেদের কারবারের স্বার্থে এই সিসিটিভি বসিয়েছিল বলে মনে করছে তদন্তকারিরা। বর্ধমান শহরের মাঝে বসে হেরোইন সাপ্লাইয়ের অভিযোগ উঠেছে অথচ ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পেল না? গোয়েন্দা দফতরের কাছে কোনও খবর ছিল না? হঠাৎ করেই হেরোইন তৈরির যন্ত্রপাতি, ১৩ কেজি হেরোইন, রাসায়নিক দ্রব্য, যার বাজার মূল্য ৬৫ কোটি টাকা উদ্ধার হয়ে গেল।
জানা গিয়েছে, বাবর ও রাহুল স্থানীয়দের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেন। অবসরপ্রাপ্ত জনৈক পুলিশ কর্তার মতে, ভদ্রপাড়ায় থেকে অপরাধ করার এটাই ইউএসপি। ব্যবহারে উদারতা দেখাতেই হবে। তবে রাত-বিরেতে গাড়ি করে তাঁরা বাইরে বেরোতেন। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছে, স্থানীয় স্তরে কেউ এদের মদত করত কীনা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বাবর বা রাহুলের কোনও যোগাযোগ ছিল কী না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, বর্ধমান থেকে প্রায় সর্বত্রই সড়ক ও রেলপথে যাতায়াতও করা যায় অনায়াসে। খাগড়গড়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে নানান অভিযোগ উঠেছিল। কাদের মদতে বর্ধমান শহরে বসে কোটি কোটি টাকার হেরোইনের কারবার ফেঁদেছিল বাবা-ছেলে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বর্ধমানবাসীদের অপশোষ, একটা ঐতিহ্যশালী বর্ধিষ্ণু শহর একের পর আন্তর্জাতিক অপরাধীদের ডেরা হয়ে উঠছে। তার দায় কে নেবে?