'আমাদের ফেভারিট রাহুল গান্ধী।' সবার সামনেই বেঙ্গালুরুর সভায় এভাবেই সম্বোধন করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে সনিয়া ও রাহুলের মাঝে বসা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করা। কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগেও কংগ্রেসকে তেড়ে আক্রমণ করেছেন মমতা থেকে অভিষেক। রাহুল গান্ধীকেও নিশানা করতে ছাড়েননি। সনিয়া গান্ধী নিয়েও উৎসাহ দেখাননি বিগত দিনে। কী এমন হল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের? এখন সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপি বিরোধী মহাজোট গঠনে তৃণমূল কংগ্রেসের এই ভূমিকার কারণ নিয়ে একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষত কংগ্রেসকে বাড়তি গুরুত্ব কেন দিলেন মমতা? এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভূমিকার একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত দিল্লিতে সিবিআই, ইডির তদন্ত। তাতে তৃণমূলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর জেলে যাওয়া। তারপর অভিষেকের দিকে আঙুল ওঠা, যে কোনও সময় জেলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। ফলে সেখান থেকে বিজেপি সরকারকে সরাতে চাইছেন মমতা। ফলে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে টিকে থাকার কারণেই কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকেছেন। সেকারণেই কর্নাটকে জেতার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দিল্লিতে সরকার গঠন হলে সিবিআই, ইডির তদন্ত বন্ধ হবে, সেটা তো খোলাখুলি বলেছেন।'
আরও পড়ুন- বিরোধীদের মহাজোট: দারুণ কৌশল, মহা-ফায়দা তৃণমূল-বিজেপি’র
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এরাজ্যে মুসলিমদের বড় সমর্থন পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলনেত্রী নিজেও এই ঘোষণা করেছেন একাধিকবার। তবে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের বেশ কিছু মুসলিম অধ্যুষিত জায়গায় বেগ পেতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এমনকী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে তৃণমূল পরাজিত হয়। অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, 'দ্বিতীয়ত রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্বপূ্র্ণ বিষয় রয়েছে মুসলিম ভোট ব্যাংক। মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর সহ একাধিক মুসলিম এলাকাগুলোতে কংগ্রেস ভালো ফল করছে। ফলে মুসলিম ভোটেরদের কাছে বার্তা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিরোধী মুখ হিসাবে ততটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেমন গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে গিয়ে কংগ্রেসের ভোট ভাগ করে দেওয়ার ফলে বিজেপি জয়ী হয়েছে। তার কারণে মুসলিম মনের মধ্যে রেখাপাত করেছে। পঞ্চায়েতে এত হিংসার মধ্যেও মুসলিম ভোটারদের একটা অংশ সরে গিয়েছে। মুসলিমদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে চাইছে তৃণমূল। এটা মমতাকে আরও বাধ্য করছে কংগ্রেসকে আঁকড়ে ধরতে।'
আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধীকে ‘ফেভারিট’ বললেন মমতা, সনিয়া-তনয়ই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
আরও পড়ুন- বিরোধী জোটের নাম কেন ‘INDIA’ হল, জানুন নেপথ্যের গল্প
সনিয়া ও রাহুলের পাশে বসে সভা করায় রাজ্য কংগ্রেসের অন্দরমহলেও জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মহাজোট বাস্তবায়িত হলে এরাজ্যে কংগ্রেসের যেটুকু সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে তার কি হাল হবে তা নিয়েই কপালে ভাঁজ পড়েছে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশের। একথা তাঁরা আড়ালে-আবডালে বলছেনও। বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, 'মহাজোট হলে এরাজ্যে কংগ্রেসের বিরাট ক্ষতি হবে। তারপর ক্ষতি হবে সিপিএমের। বিজেপি ভার্সেস তৃণমূল লড়াই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন মমতা।'