ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা বলয় তুলে নেওয়ার পরও বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা দলের বসে যাওয়া বা বিক্ষুব্ধ অংশের হয়ে গলা ফাটিয়ে যাচ্ছেন। মোদ্দা কথা 'কোনঠাসা'দের নিয়ে বিদ্রোহ জারি রেখেছেন অনুপম। দলের একাংশের দাবি ছিল, বাংলায় অনুপমের সাম্প্রতিক কর্মসূচির জন্যই তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও থেমে নেই প্রাক্তন এই সাংসদ। তবে রাজনৈতিক মহলে এমন প্রশ্নও উঠছে, জেলাওয়াড়ি দৌঁড়ঝাঁপ আটকাতেই কি দলের মধ্যেই ষড়যন্ত্র চলছে? তিনি সামাজিক মাধ্যমেও সমানতালে দলের অবহেলিত, বঞ্চিতদের হয়ে ঝোড়ো ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন। কার্যত রাজ্য নেতৃত্বকে যেন কোনও পাত্তাই দিচ্ছেন না অনুপম হাজরা!
আরও পড়ুন- সটান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীরা! বেরিয়ে এসে কী পরামর্শ দিলেন?
অনুপমের ভূমিকা নিয়ে বঙ্গ বিজেপির একাংশ অস্বস্তি প্রকাশও করেছে। কিন্তু বুধবারও সামাজিক মাধ্যমে রামপুরহাটের 'কোনঠাসা' বিজেপি নেতা সোমনাথকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে 'হিরো' বলে তাঁর পাশে থেকে দলকে কড়া বার্তা দিয়েছেন অনুপম হাজরা। এদিকে বঙ্গ বিজেপির কর্মসূচিতেও পুরনো নেতৃত্বের অনেককেই এখন দেখা যায় না। জেলা স্তরেও একই দশা। জেলাগুলিতে সভাপতিদের চোর বলে দাগিয়ে দিয়ে পোস্টার পড়ছে। বীরভূম, বর্ধমান, দক্ষিণ, ২৪ পরগনায় জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এসেছে বিক্ষোভের ঘটনা। চোর ও দুর্নীতিগ্রস্তরা দলের পদে রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। অনুপম এক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলেছেন, এরপর কি তৃণমূলকে চোর বলার জায়গায় থাকব আমরা?
আরও পড়ুন- আচমকা নবান্নে হানা শুভেন্দুর, মমতার অনুপস্থিতিতে ছাড়লেন বিরাট হুঙ্কার
অনুপম অবহেলিত, বঞ্চিত তথা বিক্ষুব্ধ এমনকি দল থেকে সাসপেন্ড হওয়া নেতৃত্বের পাশে থাকছেন বলে বার্তা দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, বঙ্গ বিজেপি অনুপমের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হলেও এখনও কি তাঁকে কোনও শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার নেই রাজ্য বিজেপির। যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেয় তাহলে কি রাজ্যে অনুপমের বিকল্প কর্মসূচির পিছনে কারও মদত রয়েছে? এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন- প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় নয়া মোড়, বিচারপতি সিনহার নির্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে রাজনৈতিক গ্রাফ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল বিজেপির। তারপর ক্রমশ নিম্নগামী হয়েছে। যখন গেরুয়া শিবিরে শুভেন্দু অধিকারী থেকে একাধিক তৃণমূল নেতৃত্ব যোগ দেয়নি তখন বিজেপি রাজ্যে ১৮টি লোকসভা আসনে জয় পেয়েছে। এমনকী ওই নির্বাচনে অসংখ্য বুথে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারেনি পদ্মশিবির। সেই সময়ের লড়াই করা হাজার হাজার কর্মী ও নেতৃত্ব এখন বসে গিয়েছেন। এরইমধ্যে লাগাতার বিদ্রোহ অব্যাহত অনুপমের। প্রথম দিকে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য মুখ খুললেও, অনুপম পাল্টা দিতেই এখন এই বিষয়ে বঙ্গ বিজেপি প্রকাশ্যে নীরবতা পালন করছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব দলের বসে যাওয়া অংশের ভোট ধরে রাখতে মরিয়া। কমিটেড ভোট সুইং করলে সেক্ষেত্রে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বড় বিপদে পড়তে পারে বিজেপি।