রাজ্যে গ্রামপঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের আরেকবার রাজনৈতিক পরীক্ষা। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধীরা। তবে ২০২১ নির্বাচনের পর বাংলায় যতগুলি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হয়েছে, সব আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী, আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনেও ৩ লক্ষের বেশি ব্যবধানে বিজেপিকে পরাজিত করেছে তৃণমূল। তবে পঞ্চায়েতের আগে সাগরদিঘির উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বড় ব্যবধানে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে নারাজ বাম-কংগ্রেস আর বিজেপিও।
সাগরদিঘিতে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপির তাবড় নেতৃত্ব প্রচারে নেমেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘোষণা, মুর্শিদাবাদের ওই আসনে লড়াই হবে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের। একটা সময় মুর্শিদাবাদ ছিল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। ২০১৯-এ বাংলায় যে দুটি লোকসভা আসনে কংগ্রেস জয় পেয়েছে, তার মধ্যে অধীর চৌধুরীর বহরমপুর অন্যতম। মুর্শিদাবাদে সংগঠন মজবুত করতে অনেকটা সময় লেগেছে তৃণমূলের। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কে বাজিমাত করবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২ মার্চ পর্যন্ত।
সাগরদিঘি কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন তৃণমূলের সুব্রত সাহা। এর আগে ২০১১ ও ২০১৬-তেও ঘাসফুল প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর অকালপ্রয়াণে এই উপনির্বাচন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী ৫০.৫৯ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থী ২৪.০৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছিল ১৯.৪৫ শতাংশ ভোট। তবে ২০১৬-তে টেনেটুনে পাশ করেছিল তৃণমূল প্রার্থী। মাত্র ২৬.২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বাজিমাত করেছিলেন সুব্রত সাহা। প্রায় সমান সমান ভাবে ভোট ভাগ হয়েছিল কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে। বিজেপি পেয়েছিল ১৯ শতাংশ ভোট। ২০১১-তে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূল জয় পেয়েছে। ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। এদিকে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ এলাকার বিধানসভা উপনির্বাচন হলেও কলকাতার মানিকতলা কেন্দ্রের কথা ঘোষণা করা হয়নি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচন দোরগোড়ায়। স্বভাবতই সাগরদিঘিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শাসক-বিরোধীরা। কে সাঁতার কেটে পাড়ে উঠবে, তারই উদ্যোগ চলছে জোরকদমে। কেউ এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। নির্বাচনের ফলাফল ভালো হলে মনোবল বাড়বে জয় পাওয়া রাজনৈতিক দলের। পাশাপাশি ভোট লুঠের পরিস্থিতি তৈরি হলে বিরোধীরা ফের বলার সুযোগ পাবে। মোদ্দা কথা সাগরদিঘির উপনির্বাচন তাই এখন শাসক-বিরোধী সবার কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন- ‘একটা বুথেও তৃণমূল হারলে সেটা…..বুথ’, সাগরদিঘির প্রচারে এ কী বললেন অভিষেক!
ঘাসফুলে থাকাকালীন একসময় এই জেলার সংগঠন বিস্তারের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এখন বিরোধী দলনেতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, পুরোনো চেনা ময়দান। তাই চেষ্টার কসুর করছেন না শুভেন্দুও। কর্মিসভা থেকে জনসভা করেছেন তিনি। সভা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীও। রবিবার জনসভা করে ১ লক্ষের বেশি ব্যবধানে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যালঘু ভোটও এখানে বড় ফ্যাক্টর। তাঁরা এবার কোন দিকে ঝুঁকবেন, তা-ও দেখার আছে। উপনির্বাচনে প্রচারের ঢক্কানিনাদে লড়াই যেন একেবারে হাড্ডাহাড্ডি। তাই, ২৭ ফেব্রুয়ারি ওয়ান ডে খেলার ময়দান কেমন থাকবে, সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।