থোড়াই কেয়ার ১৪৪! কবজির জোরেই পঞ্চায়েতে বাজিমাতের প্রবণতা প্রায় সর্বত্র!

প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা প্রয়োগে ব্যর্থ?

প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা প্রয়োগে ব্যর্থ?

author-image
Joyprakash Das
New Update
bengal panchayat election 2023 144

বঙ্গে মনোনয়ন অশান্তি এড়ানো যাচ্ছে না।

এবারও রক্তাক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব। রাজ্যজুড়ে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা। খুন, জখম, পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমার ফুলঝুড়ি, সংঘর্ষ, মারধর করে মনোনয়নে বাধা, বিডিও অফিসের সামনে থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার তৃণমূল নেতা। পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন উত্তপ্ত হচ্ছে রাজ্য। ১৪৪ ধারা জারি করার পরও উত্তেজনা-সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। কি বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে আইনীজীবীরা? প্রশাসন কি ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ? এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।

Advertisment

সোমবার বর্ধমান থেকে মীনাখাঁ, বাঁকুড়া থেকে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া সর্বত্র মনোনয়ন পত্র জমা নিয়ে অশান্তি দেখেছে রাজ্যবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারির পরও শান্তির লেশমাত্র নেই। মঙ্গলবার ভাঙড়ের দৃশ্য ১৪৪ ধারার কাপড় খুলে দিয়েছে। ক্যানিং বিডিও অফিসেও অস্থির চিত্র। মোদ্দা বিষয় হল, ১৪৪ ধারা যে শুধু কথার কথা তাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অভিজ্ঞমহলের বক্তব্য, এই ধারা প্রয়োগ করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার কোনও প্রয়াস নেই রাজ্য সরকারের। রাজ্যের পুলিশ তো বশ্যতা স্বীকার করতেই ভালবাসে।  

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'মূলত তিনটে বিষয় লক্ষ্য করার। প্রথমত, ১৪৪ ধারা জারি করতে গেলে যে ধরনের পুলিশ দরকার তা রাজ্যের হাতে নেই। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে এক ধরনের লুম্পেন বাহিনী তৈরি হয়েছে। যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ও রাজনীতি করে অর্থনীতিকে নিশ্চিত করে। এরা সিন্ডিকেট চালায়, পঞ্চায়েত পরিচালনা করে সম্পদ সৃষ্টি করে, প্রমোটারি করে। এই শ্রেণিকে নিয়ন্ত্রণ করার জায়গায় সরকার নেই। কারণ, এটা জীবীকার লড়াই। ফলে যে কোনও ভাবে বিরোধীদের আটকাতে হবে। তার রাজনৈতিক অবস্থান যাতে নড়ে যায়, সেটা তাঁরা চাইবে না। এই লুম্পেন শ্রেণি সাংস্কৃতিক ভাবে প্রচন্ড বেপরোয়া। শাসকদল ও পুলিশ-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে এদের সহজে শাসন করতে পারবে না।'

পশ্চিমবাংলার পুলিশের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, 'গত বেশ কয়েকটা বছর ধরে রাজ্যের পুলিশ বার বার পরাজয়ের ছবি দেখে অভ্যস্ত। আলিপুরে থানা আক্রমণের সময় পুলিশ ফাইল মাথায় নিয়ে টেবিলের তলায় লুকিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর থানায় গিয়ে ধৃতদের ছাড়িয়ে নিয়েছে। গৌরমোহন কলেজে এসআইয়ের মৃত্যু, ভাঙড়ে একের পর এক পুলিশ মার খেয়েছে। এই সব ঘটনায় স্পষ্ট পুলিশের মধ্যে পরাজয় প্রবণতা বেড়েছে, পলায়ন বৃত্তি দেখে পুলিশ আত্মবিশ্বাস পুরো হারিয়েছে।' দক্ষতা স্তরও পুলিশের শূন্য বলে মনে করেন বিশ্বনাথবাবু।

Advertisment

আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী? যুগান্তকারী অবস্থান হাইকোর্টের!

রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, মনোনয়ন পর্বে বোমা-গুলি-অশান্তি অব্যাহত থাকলে ১৪৪ ধারা জারি করার অর্থ কি? ১৪৪ ধারা জারি করার পর অশান্তি কমেনি বরং বেড়েছে। বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, '১৪৪ জারি করে সরকার। সরকার যদি প্রয়োগ না করে তাহলে কিছু করার নেই। ইমপ্লিমেন্ট না করলে কি করে হবে।' অভিজ্ঞমহলের মতে, সোম ও মঙ্গলবারের ঘটনায় পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নে ১৪৪ ধারা জারি ও  গন্ডগোল যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে।

panchayat election 2023 Section 144 panchayat election