Arjun Singh: ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) ব্যারাকপুর আসনটি ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। কালীঘাটে তৃণমূল (TMC) কংগ্রেসের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তালিকায় নাম না দেখে তৎকালীন ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংয়ের (Arjun Singh) মুখ একেবারে থমথমে। কালীঘাট থেকেই ছুটলেন দিল্লি (Delhi)। রাতারাতি জার্সি বদলে BJP-র টিকিটে প্রার্থী হলেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে। হইহই ব্যাপার।
তখন ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের ফল নিয়ে তৃণমূল যুবর তৎকালীন সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, ২ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয় পাবে তৃণমূল। ২ লক্ষের একটাও কম পাবে না। গণনা শেষে দেখা গেল, তৃণমূল ছেড়ে আসা অর্জুন সিংয়ের কাছে পরাজিত হলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী (Dinesh Trivedi)। পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই গেরুয়া শিবির থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসেন অর্জুন সিং। কিন্তু অর্জুন পুত্র ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিং (Pawan Singh) বিজেপিতে থেকে গিয়েছেন।
দু’তিন দিন আগে নবান্ন গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন অর্জুন। রবিবার প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম বাদ যেতেই নাম না করে অভিষেকের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, দেড় বছর আগে যাঁর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন অর্জুনকে ব্যারাকপুরে তৃণমূল প্রার্থী করল না? অভিযোগ তুললেও সেই কারণ ব্যাখ্যা করেননি স্বয়ং তিনি নিজেও। তাহলে কি এমন ঘটল বিজেপির ৩ জন বিধায়ককে প্রার্থী করলেও অর্জুন সিংকে তৃণমূল তালিকার বাইরে রাখল?
একটু পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে অর্জুন সিং দলে ফিরলেও ব্যারাকপুর লোকসভার অধীনে থাকা বিধানসভাগুলোর বেশিরভাগ তৃণমূল বিধায়ক প্রকাশ্যে সরাসরি তাঁর বিরোধিতা করেছেন। এমনকী তাঁকে গ্রেফতারের দাবিও তুলেছেন। তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেও ছাড়েননি। জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম (Somnath Shayam) তো এমন দিন যায়নি যে অর্জুন বিরোধিতা না করে মুখে খাবার তুলেছেন। এর সঙ্গে শিল্পাঞ্চলের অন্য বিধায়করাও একসঙ্গে অর্জুন বিরোধিতা চালিয়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দিনের পর দিন এমন ঘটনায় পরিস্থিতি যে নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বেমালুম বুঝতে পেরেছেন অর্জুন।
তাছাড়া নিত্যদিনের ওই ধরনের ঘটনা দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব থামানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, তা-ও নিশ্চয় খেয়াল করেছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, অর্জুনের দাবি মতো আদৌ কি শেষ মুহূর্তে প্রার্থী তালিকা থেকে বাতিল হয়েছে তাঁর নাম? না এর পিছনে আরও রহস্য আছে। যা খোলসা করছে না কোনও পক্ষ।
ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক অর্জুন পুত্র পবন সিং তৃণমূলে যোগ দেওয়া দূরের কথা দলের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নেন। কখনও বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশও করেননি। এদিকে রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশে বিজেপি থেকে তৃণমূলে একজন নেতা বা বিধায়ক কেউ যোগ দেননি। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, শেষ মুহূর্তে এমন কোন শর্ত কি তৃণমূল চাপিয়েছিল অর্জুনের ওপর? যা তিনি রাখতে পারেননি।
এমনকী সেই শর্ত কোনও পক্ষই সামনে আনছেন না। তবে শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের প্রার্থী হলেও যেভাবে একাধিক তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংয়ের বিরোধিতা করছে তাতে লড়াইয়ের ময়দান যে কণ্টকাকীর্ণ তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। অর্জুনের দাবি অনুযায়ী শেষ মুহূর্তে ব্রিগেড মঞ্চে পার্থ ভৌমিকের ডাক কতটা আকস্মিক? তাও কিন্তু বড়সড় প্রশ্নের মুখে।