আমতার ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যু এখনও রহস্যই থেকে গেল। নির্দিষ্ট দিনেই তদন্ত সম্পূর্ণ করে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আনিস হত্যার তদন্ত এখনও মাঝপথে। এরই মধ্যে দামামা বেজে গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের। ঘটনার পর আনিসের বাড়ি গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতৃত্ব। আনিসের বাবা সালেম খানকে নবান্নে নিয়ে আসার প্রবল চেষ্টা তখন ব্যর্থ হয়েছিল। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে আনিসের হত্যা কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে চর্চা অব্যাহত রয়েছে। আনিসের দাদা সামসুদ্দিন খাঁন এবার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের নজর রয়েছে হাওড়ার আমতার কুশবেড়িয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকেও।
আমতা থানায় আনিসের বাবা সালেম খানের এফআইআর-এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ গভীর রাতে ৬-৭জন পুলিশ বাড়িতে ঢুকে তাঁর ছেলেকে খুন করে ওপর থেকে ফেলে দিয়েছে। তার আগে বন্দুক দেখিয়ে বাড়ির দরজা খুলতে বাধ্য করেছে পুলিশ। ওই পুলিশ অফিসার-কর্মীদের শাস্তির দাবি করেছিলেন তিনি। তারপর থেকেই এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সবার একটাই দাবি, আনিসের হত্যাকারীদের কড়া সাজা দিতে হবে। পুলিশ পরিকল্পনা করে কান্ডটি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল আনিসের পরিবার ও প্রতিবেশীরা। এখানকার কুশবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের ১৪টি আসনেই লড়াই হচ্ছে। এখানে পঞ্চায়েতে কোনও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নেই। কোনও কোনও বুথে আবার সরাসরি সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হচ্ছে। এই এলাকার মানুষ আনিস হত্যা রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়ায় বারে বারেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এখানকার নির্বাচনের অন্যতম ইস্যুই আনিস হত্যা।
আইএসএফ আনিসকে তাদের দলের কর্মী বলে দাবি করেছিল। তবে এই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইএসএফের কোনও প্রার্থী নেই। আনিসের দাদা সিপিএমের হয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী হয়েছেন। তবে কুশবেড়িয়া পঞ্চায়েতে বিজেপিও ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। সিপিএম ১৪টির মধ্যে ১২টি ও কংগ্রেস ২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আনিসের গ্রাম সারদায় ৩টে আসনে সরসারি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের লড়াই হচ্ছে।
আরও পড়ুন- নজিরবিহীন! রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ ইস্যুতে চরম পদক্ষেপ রাজ্যপালের
আনিস খান মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে সিট তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করবে। দোষীরা শাস্তি পাবে। তাছাড়া আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল। নির্বাচনেও সাহায্য করতেন আনিস। বলেছিলেন মমতা। তবে রাজ্য পুলিশের ওপর আস্থা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন আনিসের বাবা সালেম খান, দাদা সাবির খান সহ তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি করতে থাকেন। যে পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তাঁরা কি করে নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন? দাবি করে আনিসের পরিবার। আনিসের পরিবারকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল নবান্নে এসে মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এই পরিবারের দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রী যেন তাঁদের বাড়িতে আসেন। কিন্তু সেখানে মমতা যাননি। ২১ ফেুব্রয়ারি আনিসের সারদা দক্ষিণ খাঁ পাড়ার বাড়িতে তখন হাজার হাজার মানুষ। রাজ্যের মন্ত্রী পুলক রায়, সাংসদ সাজদা আহমেদ আনিসের বাড়িতে গেলে চরম ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়েন। দোষীদের বিচারের দাবিতে স্লোগান চলতে থাকে।
আনিস কাণ্ড নিয়ে ক্ষোভে ফুটতে দেখা গিয়েছে কুশবেড়িয়া অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে। স্থানীয় বিধায়ক থেকে পঞ্চায়েতের কর্তাদের ওপর ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল ওই এলাকার মানুষজনের মধ্যে। স্থানীয়দের মধ্যে আনিসের প্রভাব ছিল বলেও এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কারণ, সামাজিক নানা সমস্য়ায় আনিস ঝাঁপিয়ে পড়তো বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় এই সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ কতটা আছড়ে পড়ে স্থানীয় সরকার গঠনের নির্বাচনে। কুশবেড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির ৪১ নম্বর আসন থেকে কাস্তে-হাতুড়ি প্রতীকে ভোটে লড়াই করছেন আনিসের দাদা সামসুদ্দিন। আনিসের দাদাকে কতটা সমর্থন করেন নির্বাচকরা তা-ও জানা যাবে ৮ জুলাই।