লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি। খুব দরকার ছাড়া কেউই বাড়ির বাইরে পা রাখছেন না। রাস্তায় নামমাত্র সংখ্যায় চলছে যানবাহন। চলছে না আবাসন বা পিচরাস্তার কাজ। উনুন জ্বলছে না ফুটপাতে। এই পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের সঙ্গে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে কলকাতার বাতাসও। বায়ু দূষণের মাত্রা একেবারে নেই বললেই চলে। কমেছে শব্দ দূষণও। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন পরিবেশবিদরা।
কলকাতার রাস্তায় ডিজেল, পেট্রলের গাড়ির ধোঁয়াই পরিবেশ দূষণের মূল উপাদান যোগায়। লকডাউনের কারণে কলকাতা এখন নিস্তব্ধ। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, "গাড়ি না চললে ধোঁয়া যদি না বের হয়, হর্ন যদি না বাজে তাহলে বায়ুদূষণ, শব্দ দূষণের মাত্রা কমতে বাধ্য। তাছাড়া কলকারখানাও বন্ধ। লকডাউনের ফলে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়বে পরিবেশে।" পরিবেশের জন্য যদি মাঝে মধ্য়ে এমন লকডাউনের দাবি ওঠে? সুভাষ দত্তের কথায়, "একটা সময় নিয়ম ছিল অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি এয়ারকন্ডিশনড চলবে না। কিন্তু এখন সেটা নেই।"
১৫ বছরের গাড়ি বাতিল বা এলপিজি, সিএনজি অটো চালু করে দূষণ রোখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আবাসন নির্মাণ, ফুটপাতের উনুনের ধোঁয়াও দূষণের অংশীদার বলে মনে করে পরিবেশবিদরা। তাছাড়া গাছপালার অভাব তো শহরজুড়েই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোস্কাইড, পিএম ২.৫, পিএম ১০ এবং ওজন (ও৩), অ্যামোনিয়া-সহ নানা উপাদান বাতাসে স্বাভাবিক মাত্রা পার করলেই মানব শরীরের নানা ক্ষতিসাধন করে। এলার্জি, ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, সিওপিডি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। তবে লকডাউনের কারণে আপাতত স্বস্তিতে কলকাতার বাতাস।
আরও পড়ুন: আইসোলেশন ওয়ার্ডের গুরুত্ব কী? কীভাবে গড়ে ওঠে এই ওয়ার্ড?
পরিবেশবিদ ড. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, "মহানগরে যানবাহন থেকে সব থেকে বেশি দূষণ ছড়ায়। আপাতত লকডাউনের জন্য় সেগুলি কমে গিয়েছে। মানুষ কম বেরচ্ছে। এখন ছোট-খাট কলকারখানাও বন্ধ। ফলে এই অবস্থা আগের থেকে প্রচুর পার্থক্য় গড়ে দেবে। এটা খুবই পজিটিভ।" তাঁর মতে, "গাড়ি ও কারখানা থেকে সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোস্কাইড, পিএম২.৫, পিএম১০ বাতাসে এসে মেশে। গাড়িতে ডিজেল ও পেট্রলের ব্যবহারে দূষণের মাত্রা ভীষণ বেড়ে যায়। এখন এই তারতম্যের পার্থক্য এসেছে। এটা ভাল দিক।"
রাজ্য় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যানে কল্যাণন রুদ্রের বক্তব্য, "এখন মানব জাতি বিপন্ন, প্রকৃতি প্রসন্ন। ছোটবেলায় যেমন রাতে আকাশের তারা দেখতাম। জ্বলজ্বল করত। এখন সেই পরিবেশ ফিরেছে কলকাতায়। আকাশেই তাকালেই তারার জল চকচক করছে। মহানগরে ফিরেছে পাখির কলতান।"