পরিবারের স্বার্থেই সেদিন খাতা-কলম ছেড়ে কাস্তে-কোদাল তুলে নিয়েছিল মুর্শিদাবাদের মৌসুমী বিশ্বাস। প্রায় বছর ২৪ আগের কথা, তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিনি। জীবন যেন রাতারাতিই পাল্টে গেল। দাদার মৃত্যুর খবর পেয়েই তড়িঘড়ি নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। একটাই চিন্তা, পরের দিন কে খাওয়াবে? সংসার কীভাবে চলবে? তার পরেই লড়াই শুরু।
Advertisment
সেই থেকে সংসারের সকলের পেট ভরতে একাই যুদ্ধ করছেন মৌসুমী। দাদা একমাত্র রোজগেরে মানুষ ছিলেন। সংসারের হাল ধরতে নিজেই নেমে পড়লেন তিনি। পড়াশোনা সবকিছুই জলাঞ্জলি দিলেন। মাত্র দশ কাঠা জমি, তাতে আর কতটা চাষ হয়? এদিকে বাড়ির অবস্থা একেবারেই খারাপ। বাড়িতে এক দিদি এবং দাদা মানসিক ভাবে অসুস্থ, অন্যদিকে আরেকজন বিধবা মানুষ - তাঁদের খেয়ালও রাখতেই হবে। প্রত্যেকের অভাব-চাহিদা এবং দেখভাল করতেই মৌসুমীর চাষাবাদের কাজ শুরু।
৪৮ বছরের মৌসুমী, নিজে হাতে বীজ বপন থেকে ফসল উৎপাদন সবকিছুই করতেন। প্রথমে শুরু করলেন সবজি দিয়ে। চাষের হাল হকিকত বুঝে নিয়েই চেষ্টা করেন ফলন বাড়ানোর। কীভাবে উৎপাদন বাড়বে, কম খরচ এদিকে পরিমাণে বেশি। মৌসুমী চাষবাসের সঙ্গে কাজে লাগালেন নিজের শিক্ষাকে। ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমেই আবিষ্কার করলেন ধানে নতুন বীজ, এঞ্জেমেনি। একটির সঙ্গে আরেকটি মিলিয়েই রোপণ করেন, আর তারপরেই কেল্লাফতে। শুরু হল নতুন ধরনের চালের উৎপাদন - সময় কম লাগে। জলের পরিমাণও যথেষ্ট কম, সঙ্গে কীটনাশক সেভাবে প্রয়োজন হয় না।
ধীরে ধীরে সকলের মধ্যেই এই বীজ তিনি ছড়িয়ে দিতে থাকেন। মৌসুমীর বক্তব্য, "আমার সঙ্গে সঙ্গে যদি অন্য চাষি ভাইদের লাভ হয় তবে কেন নয়!" নিজের দায়িত্বেই তাঁদের কাছে এই নতুন চালের বীজ নিয়ে পৌঁছে যান তিনি। লাভ-লোকসান সম্পর্কেও ধারণা দেন। মুর্শিদাবাদ ও সেই এলাকার প্রথম মহিলা চাষি হিসেবে মৌসুমী বিশ্বাসকে অনেকেই চেনে। প্রচুর মানুষের অনুপ্রেরণাও তিনি। এমনকি তাঁর আবিষ্কৃত চাল নিয়ে গবেষণা পর্যন্ত চলছে।