শহরে সবেমাত্র পড়েছে শীতের আমেজ। আর শীতের দুপুর মানেই ‘ডেসটিনেশন’ আলিপুর চিড়িয়াখানা। কোভিড পরিস্থিতির কারণে বিগত ২ বছরে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ‘জু ফেস্টিভ্যালের’ আয়োজন করে উঠতে পারেনি। অতিমারী পর্ব মিটতেই জু ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে উৎসবের মরশুমে সাজিয়ে তোলা হয় চিড়িয়াখানা।
ফেস্টিভ্যাল ঘিরে কচিকাঁচাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। ১৪ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বার্ষিক উৎসব গতকালই শেষ হয়েছে। ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমেই শীতের মরশুমে শুরু ‘উৎসবের’ প্রস্তুতি। উৎসবের মূল বিষয় বন্যপ্রাণী সচেতনতা। সেই উৎসবে সামিল হয় বিভিন্ন স্কুলের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা।
বন্যপ্রাণী নিয়ে কর্মশালা, ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি, ক্যুইজ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা সব মিলিয়ে এই পাঁচদিন চিড়িয়াখানায় ছিল একেবারে সাজো সাজো রব। জু ফেস্টিভ্যালের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশীষ কুমার সামন্ত বলেন, “ফি বছর শীতে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এলেও বহু মানুষই বন্যপ্রাণী নিয়ে সচেতন নন। ফলে নানা সময় খাঁচার ভিতরে খাবার ছুড়ে দেওয়া থেকে পশুপাখিদের উত্যক্ত করার মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তাই সচেতনতা বাড়াতে আগামী প্রজন্মের নাগরিক হিসাবে স্কুল পড়ুয়াদের বেছে নেওয়া হয়েছে। নানা ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে এই ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে সবটাই বন্যপ্রাণ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকে কেন্দ্র করেই”।
পড়ুয়াদের উৎসাহিত করতে প্রতি বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীকে যথাক্রমে ৫ হাজার, ৩ হাজার এবং ২ হাজার টাকা পুরস্কারও দেওয়া হয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তরফে। কোভিড পর্ব কাটিয়ে ফের উৎসবের মেজাজেই ফিরতে চলেছে আলিপুর চিড়িয়াখানা, এবার শীতে রেকর্ড ভিড়ের আশা করছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: < যোগাসনে বিশ্বজয় বঙ্গতনয়ার, তরুণীর নজরকাড়া কীর্তিকে কুর্নিশ >
পুজোর আগেই আলিপুর চিড়িয়াখানায় এসেছে নতুন অথিতি। মা দ্যুতি জন্ম দিয়েছে জেব্রা শাবকের। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতেই আলিপুর চিড়িয়াখানায় (Alipore Zoo) জন্ম নিয়েছে নতুন অতিথি। ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে তৃণা। তৃণা আলিপুর চিড়িয়াখানার এক জিরাফ। পাশাপাশি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, ভারতবর্ষের সমস্ত চিড়িয়াখানার মধ্যে সবথেকে বেশি অ্যানাকোন্ডা রয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই। গত বছর ১১ জুলাই জন্ম হয় এই অ্যানাকোন্ডাগুলির। ২০১৯ সালের জুন মাসে চেন্নাই থেকে আলিপুরে যে চারটি হলুদ অ্যানাকোন্ডা নিয়ে আসা হয়েছিল, প্রথম এক বছর পর তাদেরই আরও সাতটি অ্যানাকোন্ডার জন্ম হয়। এখন অ্যানাকোন্ডার সংখ্যা দাঁড়ালো মোট কুড়িটি।
আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে জানানো হয়েছে জেব্রার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেখানে বেড়েছে জিরাফের সংখ্যাও। এর আগেও এখানে অনেক সুস্থ সবল পশুর জন্ম হয়েছে। চিড়িয়াখানার চিকিৎসক এবং কর্মীরা প্রশংসার দাবি রাখেন। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু শিম্পাঞ্জি, বাঘ, জিরাফ, জেব্রা, মার্মোসেট বাঁদর, কুমির এবং পাখির খাঁচাগুলি সঙ্গে তো রয়েছে জিরাফ, জ্রেবা, অ্যানাকোন্ডাও।
ফি বছর ২৫ আর ৩১ ডিসেম্বরের উপরে বিশেষ নজর থাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কারণ ওই দুটি দিনে চিড়িয়াখানায় কার্যত মানুষের ঢল নামে। পাশাপাশি জানুয়ারির প্রথম ২ সপ্তাহে ভিড় থাকে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তবে কোভিড পর্ব মিটতে শীতে চিড়িয়াখানায় মজা বেশ চেটেপুটেই উপভোগ করবে আম-আদমি, পাশাপাশি ভাঙতে পারে অতীতের সব রেকর্ড এমনটাই মনে করছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।