বাংলাদেশে দুর্গাপুজোয় হিংসা এবং হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় গোটা বিশ্বে মুখ পুড়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। ভারত থেকে আমেরিকা, প্রত্য়েকেই হিন্দুদের উৎসবে হিংসা, হিন্দুদের উপর আক্রমণে নিন্দা জানিয়েছে। পরিস্থিতি এখনও অগ্নিগর্ভ একাধিক জেলায়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একাধিক জেলায় হিংসা-অশান্তি, দুষ্কৃতী তাণ্ডব রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে সরকার। তিনি আগেই বলেছেন, এসব একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না। সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে হাসিনার সাফ নির্দেশ, প্রত্যেকটি ঘটনায় যুক্তদের যেন কঠোর শাস্তি হয়। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই নির্দেশ দেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত হিংসা, হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় ৭০-এর বেশি মামলা দায়ের হয়েছে। গত পাঁচদিনে পুলিশ ৪৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে, বাংলাদেশে দুর্গাপুজো ঘিরে অশান্তি এবং তারপর হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় গর্জে উঠল আমেরিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। বিদেশ দফতরের মুখপাত্র বলেছেন, “ধর্মাচরণ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যক্তি স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। এটা মানবাধিকার। বিশ্বের যে কোনও ধর্মের মানুষ সুরক্ষিত থাকার এবং ধর্মীয় উৎসব পালনের অধিকারী।”
তিনি আরও বলেছেন, “মার্কিন বিদেশ দফতর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করছে।” প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠনের সদস্য প্রাণেশ হালদার মার্কিন বিদেশ দফতরের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর যাতে আর কোনও রকম হামলা না হয় তা নিশ্চিত করা হোক। তিনি মার্কিন মানবাধিকার সংগঠন, মিডিয়া সংস্থাগুলিকে বাংলাদেশের হিংসার ঘটনা তুলে ধরার আবেদন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত রবিবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে বাংলাদেশি হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা হিংসা, হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। বাংলাদেশ একের পর এক হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর-লুঠপাট, হিন্দুদের খুন করার ঘটনার বিচার চেয়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। মার্কিন হিন্দু সুরক্ষা সংগঠন হিন্দুপ্যাক্টের ডিরেক্টর উৎসব চক্রবর্তী বলেছেন, “এটা অত্যন্ত আতঙ্কের যে নোয়াখালির শেষ কিছু থেকে যাওয়া হিন্দুদের উপর এইভাবে হামলা হচ্ছে।”
তাঁর কথায়, “এই নোয়াখালিতেই ১৯৪৬ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানপন্থী ইসলামি মৌলবাদীরা ১২ হাজার হিন্দুকে খুন করে এবং ৫০ হাজারেরও বেশি হিন্দুকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে। পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার ৭৫ বছর পরেও সেই দৃশ্য ফিরে এল।” এর থেকে নারকীয় আর কিছু নেই। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে চারের দশকে যেখানে ২৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ছিল, তা এখন নেমে এসেছে মাত্র ৯ শতাংশে।
হিন্দুপ্যাক্ট জানিয়েছে, স্বদেশি হিন্দুদের বার বার বাংলাদেশে টার্গেট করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ৫০ বছরে ২৮ লক্ষ হিন্দুকে খুন করা হয়েছে, ১ কোটি হিন্দুকে ঘরছাড়া করে শরণার্থী হতে বাধ্য করেছে পাকিস্তানি সেনা।
আরও পড়ুন দুর্গাপুজোয় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা! হৃদয় ভেঙে চুরমার মাশরাফির, গর্জে উঠলেন ক্ষোভে
বাংলাদেশের পুজা উদযাপন পরিষদ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে দোষীদের। ফোরামের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেছেন, সরকার তাঁদের দাবি না মানলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী থেকে শাসকদলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের, প্রত্যেকে বলছেন তাঁরা পুরোটাই জানেন, শুনেছেন। আপনারা যদি সবই জানেন তাহলে দোষীদের শাস্তি দিচ্ছেন না কেন?”
বাংলাদেশ ইস্কনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হিন্দু সম্প্রদায় চুপ করে এই হামলা দেখবে না। তিনি বলেছেন, “আমাদের বিশ্বাস মৌলবাদীদের গোষ্ঠী এই ধরনের ঘৃণার উদ্রেক করছে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য। আমরা জানি, শাসকদলের বেশ কিছু সদস্য এই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন যাঁরা বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ছড়াচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি দূর্বল হবেন না বরং কড়া পদক্ষেপ করুন।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন