গালওয়ান উপত্যকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে খরস্রোতা নদী। ২০২০ সালে সেই নদী পেরিয়ে ভারতের ওপর হামলা চালিয়েছিল চিনের সেনা। লাল ফৌজকে ঠেকাতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২১ জন জওয়ান। সংঘর্ষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল চিনের। তবে বাস্তবে চিনের ক্ষতি হয়েছিল প্রকাশিত রিপোর্টের চেয়ে অনেকটাই বেশি। সংঘর্ষের পর থেকেই এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ঠিক কী ক্ষতি হয়েছিল চিনের, তা এতদিন অপ্রকাশিত ছিল।
এবার একটি অস্ট্রেলীয় দৈনিকের দাবি, সংঘর্ষের সময় খরস্রোতা নদী পেরোতে গিয়ে ডুবে প্রাণ হারিয়েছিল লালফৌজের অসংখ্য জওয়ান। তাদের এই দাবির সমর্থনে বেশ কয়েকজন গবেষক এবং চিনের ব্লগারদের কথা উল্লেখ করেছে অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রটি। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই সব গবেষক এবং ব্লগারদের নাম তারা জানতে চায়নি। তবে সেই নাম না-জানালেও অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রটির রিপোর্ট গালওয়ান-কাণ্ডে উল্লেখযোগ্য আলোকপাত করল। কারণ, এতদিন চিনের দাবি ছিল, গালওয়ান-কাণ্ডে তাদের মাত্র পাঁচ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে।
গালোয়ান উপত্যকার সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত হার মেনেছিল চিন। কিন্তু, লালফৌজের জওয়ানদের হতাহতের পরিসংখ্যান নিয়ে এতদিন মুখে কুলুপ এঁটেছিল বেজিং। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কয়েক হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় রুক্ষ গালওয়ানকে নিয়ে চার দশক ধরেই ভারত ও চিনের টানাপোড়েন চলছে। সেই টানাপোড়েন ২০২০ সালে লালফৌজের হামলায় নতুন মাত্রা পেয়েছিল।
আরও পড়ুন পাকিস্তান-চিনের জোট নিয়ে রাহুলের মন্তব্যকে সমর্থনে নারাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রের দাবি, রাতের অন্ধকারে খরস্রোতা নদী বেরোনোর চেষ্টা করেছিলেন লালফৌজের জওয়ানরা। কিন্তু, নদীর স্রোত ঠিক কতটা তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি। তার ফলেই বহু জওয়ান ভেসে যান ওই খরস্রোতা নদীর জলের তোড়ে। সেই ঘটনার প্রায় আট মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে বেজিং দাবি করে, তাদের ৫ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল গালওয়ানের সংঘর্ষে। যদিও ভারতের পালটা দাবি ছিল, সংখ্যাটা অনেক বেশি। কিন্তু, চিন প্রকৃত সংখ্যাটা লুকোচ্ছে।
চিনের দাবি না-ভারতের অনুমান? প্রকৃত সত্যটা ঠিক কী ছিল? গত একবছর ধরে সেটাই জানার চেষ্টা করেছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রটি। এব্যাপারে সংবাদপত্রটিকে সাহায্য করেছেন চিনেরই বাসিন্দারা। তাঁরাই সংবাদপত্রটির প্রতিনিধিদের জানান, গালওয়ান-কাণ্ডের প্রকৃত সত্য লুকোনোর চেষ্টা করেছে বেজিং। ২০২০ সালের ৫ মে গালওয়ানে নতুন করে অশান্তির সূত্রপাত হয়। পরে সেই অশান্তি সেবছর ১৫ জুন সংঘর্ষের রূপ নেয়। ওই সংঘর্ষের পর গালওয়ান সীমান্তে দু'দেশই বিপুল সংখ্যক জওয়ান এবং অস্ত্রসম্ভার মোতায়েন করে। দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলেন দু'দেশের সেনা জওয়ানরা।
আরও পড়ুন গালওয়ানের সেনাকে অলিম্পিকের মশালবাহক করল চিন, ‘লজ্জাজনক’, বললেন মার্কিন সেনেটর
তারপর সেনাস্তর এবং কূটনৈতিকস্তরে দু'দেশের বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গালওয়ান সীমান্তের সমস্যা মেটেনি। এখনও দু'দেশই ওই স্পর্শকাতর সীমান্তে প্রায় ৬০ হাজার সশস্ত্র জওয়ান মোতায়েন রেখেছে। তৈরি হয়েছে অস্থায়ী সেনাশিবির। পাশাপাশি চলছে জোরদার নজরদারিও।