হইহই-রইরই পড়ে গেছে। কারণ, টেক্সাসের স্কুলে নির্বিচারে গুলি চলেছে। ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অবশ্যই নিন্দনীয় ঘটনা। বেদনাদায়ক ঘটনা। কিন্তু, সত্যি কথাটা আরও খারাপ। সেটা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুলি চলাটা নতুন কিছু না। হামেশাই চলে, যাঁরা একটু খবর রাখেন, তাঁরা এককথায় সত্যিটা স্বীকার করে নেবেন। মঙ্গলবার যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা দক্ষিণ টেক্সাসে। স্কুলটার নাম রব এলিমেন্টারি স্কুল। জায়গাটা উভালদে শহরে। আততায়ীর বয়সেও বেশি না, ১৮।
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, যে আততায়ীও নিহত হয়েছে। কিন্তু, প্রশ্নটা হল আততায়ী সালভাদর রামোস আগ্নেয়াস্ত্রটা পেয়েছিল কোথা থেকে? আর, এখানেই মজাটা। নিজের ১৮তম জন্মদিনে সে দুটো রাইফেল কিনেছিল। কোনও লুকিয়ে চুরিয়ে না। সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্রর দোকান থেকে। তার মধ্যে প্রথম আগ্নেয়াস্ত্র কেনার একদিন পর সে ৩৭৫ রাউন্ড গুলি কিনেছিল সেই আগ্নেয়াস্ত্রর জন্য।
তার ঠিক দু'দিন পর ২০ মে আরেকটা রাইফেল কিনেছিল। মানে, ইচ্ছে হলে যে কেউ আগ্নেয়াস্ত্র আর বিপুল পরিমাণ গুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিনতে পারে। তা সেই ব্যক্তির অস্ত্র কেনার প্রয়োজনীয়তা, তার ম্যাচিউরিটি এসবের কিছু দরকার নেই। সবাই তো বলছে যে অভিযুক্ত কিশোর স্কুলে পড়ুয়াদের হত্যা করেছে। কিন্তু, এটাই সম্পূর্ণ সত্যি নয়। সে দু'জন পূর্ণবয়স্ককেও হত্যা করেছে। তার মধ্যে জন্মদিনে কেনা প্রথম রাইফেল দিয়ে খুন করেছে নিজের ঠাকুমাকে।
তার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়রা জানিয়েছে, অভিযুক্ত কিশোর একা একা দিন কাটাত। শৈশবে ঠিকমতো কথা বলতে পারত না। সেই জন্য তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। জীবনে পূর্ণতার অভাব ছিল। সম্প্রতি কয়েক বছর, সহকর্মী আর অপরিচিতদের সঙ্গে তাঁর আচরণে একটা হিংস্রতা ধরা পড়ছিল। কাজের জগতেও দেখা যেত, ওই যুবক বেশি মেলামেশা করত না। শুধু কাজ করত আর চলে যেত। সত্যি কথা বলতে গেলে, কেউ তাকে তেমন একটা চিনতও না।
আরও পড়ুন- টেক্সাসের স্কুলে বন্দুকবাজের হামলা, নিহত ১৯ শিশু-সহ ২১ জন
এই ছবিটা কিন্তু, শুধু ওই কিশোরের জীবনের অধ্যায়ই না। সালভাদর রামোস আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিশোরদের একটা শ্রেণির প্রতিচ্ছবি। যারা একাকীত্বের গ্রাসে এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। আর, তাদের কারণে গত কয়েক দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বলি হয়েছে অসংখ্য কিশোর-কিশোরী। যেমন, গত বছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান হাইস্কুলে গুলি চলেছিল। চার পড়ুয়া প্রাণ হারিয়েছিল। আহত হয়েছিল আরও সাত জন।
তার ঠিক তিন বছর আগে ২০১৮ সালের ১৮ মে, হাউস্টনের সান্তা ফি হাইস্কুলে এভাবেই গুলি চলেছিল। প্রাণ হারিয়েছিল ১০ জন। যাদের অধিকাংশই আবার পড়ুয়া। ২০১৮ সালে ওই ঘটনার চার মাস আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি, ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের মেজরিটি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে গুলি চলেছিল। খুন হয়েছিল ১৪ জন পড়ুয়া। সঙ্গে স্কুলের তিন জন কর্মীও প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ভাবে পরিসংখ্যানের তালিকা যদি খোলা হয়, দেখা যাবে সেটা বিরাট লম্বা। যা, বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বিচারে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও তীব্র করেছে।
Read full story in English