ফের শান্তি ফিরছে কিয়েভে। কিয়েভ থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহারের পর ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে ইউক্রেনের রাজধানী শহর। ফিরে আসছেন বাসিন্দারাও। যুদ্ধের পরিবেশ ইউক্রেনের রাজধানী শহরের বুকে যখন ক্রমশ ছেয়ে ফেলছিল, এই বাসিন্দারাই পালিয়ে গিয়েছিলেন সীমান্তের ওপারে, নিরাপদ কোনও দেশে। ফের কিয়েভে শান্তি ফিরেছে। এই খবর পাওয়ামাত্র তাঁরা ফিরতে শুরু করেছেন নিজের ঠিকানায়। যেখানে বছরের পর বছর তাঁরা কাটিয়েছেন। এই ফেরা তাঁদের কাছে স্বাধীনতার এক নতুন অনুভূতি লাভ।
গত কয়েক মাস ইউক্রেনের রাজধানী শহরে এই শান্তিই অনুপস্থিত ছিল। তারপরে, যেন সূর্য মুখ তুলে চেয়েছে। বসন্তের এক স্নিগ্ধ বিকেলে, বাচ্চাদের কণ্ঠস্বরে ফের ভরে উঠতে শুরু করেছে কিয়েভের খেলার মাঠ। সেন্ট মাইকেলের গোল্ডেন-গম্বুজ মঠের আকাশী-নীল ক্যাথিড্রালের পাশে একটি পার্ক। এটা সেন্ট্রাল কিয়েভ। কিছু শিশু এখানে দোলনায় চড়ছিল। কেউ আবার জিমের কায়দায় উঠছিল সিঁড়ি বেয়ে। পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন ওই শিশুদের মায়েরা। এটাই যুদ্ধপরবর্তী কিয়েভ। এভাবেই ফের আগের ছন্দে ফিরতে চাইছে ইউক্রেনের রাজধানী। যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ছিল অকল্পনীয়। ঘনঘন সাইরেন, কামানের গর্জন, বালির বস্তা দিয়ে তৈরি চেকপয়েন্ট- এখন আর এসব কিছুই নেই।
কারণ, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাশিয়ার বাহিনীকে পরাজিত করেছে। একমাস ধরে রাশিয়ার সেনারা আংশিকভাবে কিয়েভকে ঘিরে রেখেছিল। ফের এই শহর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। এপ্রিলে যাঁরা এই শহর ছেড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের চেয়ে বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই কিয়েভে ফিরেছেন। যদিও ইউক্রেন প্রশাসন চাইছে না, এখনই সকলে ফিরে আসুক। কারণ এক, চারিদিকে ধ্বংসস্তূপ। পরিকাঠামো এই কয়েকদিনে আবার আগের মত তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দুই, এখনও যুদ্ধ পুরোপুরি থামেনি। ইউক্রেনের একাংশে এখনও যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার সেনা হামলা চালাচ্ছে। ফের যে তারা কিয়েভে হামলা চালাবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই।
আরও পড়ুন- ইউক্রেনে সংঘর্ষবিরতির আবেদন জানিয়েছে ভারত, সফরের দ্বিতীয় দিন ডেনমার্কে জানালেন মোদী
আর, এসব কথা চিন্তা করে এখনও অনেকে ফেরেননি। পরিবার আর শিশুদের নিয়ে পশ্চিম ইউক্রেন অথবা ইউরোপের অন্য দেশে শরণার্থী হিসেবে থেকে গিয়েছেন। যুদ্ধের আগে কিয়েভ মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ লক্ষ। ভিড়ে গমগম করত গোটা শহর। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিনের মধ্যে তা অর্ধেকে নেমে আসে। মার্চ মাসে হানি ক্যাফে, ইয়ারোস্লাভিভ ভ্যাল স্ট্রিটে একটি বেকারি এবং কফি শপ পুনরায় চালু করা হয়েছিল। সেই সময় যা পরিস্থিতি, ওই শপই ছিল কফি খেতে বসার জন্য কিয়েভের একমাত্র জায়গা। সেই সময় সতর্ক করেছিল প্রশাসন। বলেছিল, জানালার কাছে যেন কেউ না-বসেন। কারণ, বিস্ফোরণের ফলে শরীরে কাচ ঢুকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে!
Read story in English