ওলগা রোমানোভার ঠাকুমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনা হাসপাতালে নার্সের দায়িত্বে ছিলেন। চেহারাটা ছিল রোগা এবং ছোটখাটো। কিন্তু, তিনি যাঁদের শ্রুশ্রূষা করতেন, প্রত্যেকেই লম্বা-চওড়া, বড়সড় চেহারার। আর, প্রত্যেকেই আহত। সুস্থ হওয়ার জন্যই তাঁরা রোমানভার ঠাকুমা যে হাসপাতালে কাজ করতেন, সেখানে আসতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর চার বছর পর তিনি স্বামীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। রোমানোভার কাছে ৯ মে মানে ছুটির দিন। নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েতের জয়ের প্রতীকই শুধু নয়। তাঁর ঠাকুমা ও ঠার্কুদাকে স্মরণের দিনও। রোমানোভার ভাষায়, 'ভালোবাসার প্রসার ঘটানোর দিন। ছোটবেলায় ঠাকুরদা-ঠাকুমাকে যা দিতে পারেননি, সেটাই দেওয়ার দিন।'
কিন্তু, এবছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে ৯ মে একেবারেই অন্যরকম দিন। নাৎসি জার্মানির প্রতীক হিসেবে ইউক্রেনকে তুলে ধরার দিন। রাশিয়ার অতীতের ভৌগলিক চেহারায় ফেরার জন্য তাঁর চেষ্টার যে বাস্তবসম্মত ভিত্তি রয়েছে, সেকথা বোঝানোর দিন। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার প্রতি জনসমর্থন জোগাড়ের দিন। আর, সেসবের প্রতি সমর্থন জানাতেই অন্যবারের মতো এবারও রুশ যুদ্ধবিমান মস্কোর আকাশে 'Z' আকারে চক্কর দেবে। ইউক্রেনের ওপর হামলাকারী রাশিয়ার সেনারা প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য রেড স্কোয়ারে প্যারেড করবেন। মিছিলে প্রদর্শন করা হবে রাশিয়ার উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র। বাল্টিক নৌসেনার শহর বাল্টিস্কে আবার প্যারেড হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের যে পূর্বপুরুষরা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের বুকে থাকবে পূর্বপুরুষদের ছবি।
আরও পডুন- ইউক্রেনের স্কুলে আছড়ে পড়ল বোমা, ৬০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২ কোটি ৭০ লক্ষ সোভিয়েত নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিল। এই দিনটিতে তাঁদের স্মরণ করেন রাশিয়ার নাগরিকরা। কিন্তু, পুতিনের রাজনীতির কারণে, বিজয় দিবসের সেই পরিচিতি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। শতাব্দীর ভারে আদর্শগত লড়াইয়ের প্রতীক 'বিজয় দিবস' এখন হয়ে উঠেছে আগ্রাসনের প্রতীক। আর, সেই অঞ্চলের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন, যা একসময় সোভিয়েতের অংশ ছিল। বলতে গেলে যেন কার্যত গৃহযুদ্ধ। ১৯৪৫-এ রাশিয়ার 'আমরাও পারি' মনোভাবের সঙ্গে যার কোনও তুলনাই চলে না।
Read story in English