তালিবানি শাসনে দেশের সর্বত্র আতঙ্কের চিত্র। আফগানিস্তানের নানান প্রান্ত সন্ত্রাসের আতঙ্কে জর্জরিত। একের পর এক শহর দখল, মৃত্যু সঙ্গে হামলা এবং বোমাবাজি পরবর্তী দিনে আদৌ বেঁচে থাকবেন কিনা এই আশঙ্কা প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই।
দেশের উত্তরাঞ্চলে তালিবানদের অগ্রসর এবং জবরদখলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বেশ স্বল্প দিনের মধ্যেই। উত্তর আফগানিস্তানের কুন্দুজ প্রদেশের রাজধানী দখল করে এবং এক মাসের দীর্ঘ অবরোধের পর প্রতিবেশী আরেকটি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নেয় তালিবানরা। দেশে এতদিন বহাল ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং প্রায় দুই দশক পর মার্কিন সেনারা তাদের প্রত্যাহার সম্পন্ন করায় তালিবান গোষ্ঠীর আগ্রাসন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আফগান বাহিনীর উপর ধারাবাহিক আঘাতের অগ্রগতি ক্রমশই দেশের অধিকাংশে আতঙ্কের পরিস্থিতি বাড়িয়ে তুলছে।
সূত্র অনুযায়ী, কুন্দুজ শহরের প্রধান চত্বরে একটি পুলিশ বুথের উপর মিলিশিয়ামিনদের পতাকা উড়তে দেখা যায়। এটি চতুর্থ প্রাদেশিক রাজধানী ছিল যা এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তালিবান যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জানা যায়, আফগান অঞ্চল জুড়ে ক্রমশই চাপ বাড়িয়েছিল তালিবানরা এমনকি রাজধানী কাবুলে একটি হত্যা অভিযান পর্যন্ত চালায়। ঘটনার আতঙ্কে ভয় তৈরি করে মানুষের মনে।
দুই প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা জানান, তালিবানরা অগ্নিসংযোগের পর গভর্নরের কার্যালয় এবং পুলিশ সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের আয়ত্বে নেয় এবং পাশাপাশি প্রধান কারাগার ভবন তথা সেখানে গ্রেফতার হওয়া তালিবান-সহ আরও পাঁচশো বন্দিকে মুক্তি দেয়। কুন্দুজের দখল নিঃসন্দেহে তালিবানদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য লাভ। সেখানে আঞ্চলিক দখল এবং ক্ষমতা ধরে রাখার বিষয়টি পাশ্চাত্য সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারাভিযান।
কাউন্সিলম্যান গোলাম রবানি রাবানি জানান, শহরের বিমানবন্দর এবং শহরের অন্যান্য অংশে এখনও যুদ্ধ চলছে। কুন্দুজ একটি কৌশলগত চৌরাস্তা যেখান থেকে শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া যেমন সহজ তেমনই কাবুল সেখান থেকে ২০০ মাইল মাত্র। কুন্দুজের আরেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মহম্মদ ইউসুফ আইয়ুবীও বলেছেন, আফগান বাহিনী শুধুমাত্র বিমানবন্দর এবং প্রধান সেনা ব্যারাক নিয়ন্ত্রণ করে এবং শহরের বাকি অংশ তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে। আইয়ুবী দেশের চরম অবস্থায় কটাক্ষ করে বলেন, নিরীহ ও দরিদ্রদের কেবল যুদ্ধের মূল্য দিতে হয়। বাকি আফগান বাহিনী এবং তালিবান উভয়ই সাধারণ মানুষের শত্রু। একজন নিরাপত্তা দিতে পারে না এবং অন্যজন মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে না।
আরও পড়ুন তালিবানদের গুলিতে নিহত আফগান সরকারের মিডিয়া প্রধান
রাজধানী কাবুলের সরকার কর্তৃপক্ষ সূত্রে যদিও তালিবানদের উত্তরাঞ্চল অধিকারের ঘটনাটিকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং জানানো হয়েছে, আফগান বাহিনী নিজেদের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কিছু এলাকা তালিবানদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা দেশের বাকি প্রান্তেও বিজয় লাভ করবে। কুন্দুজ দখলের উদ্দেশ্য তালিবানদের সবসময়ই ছিল। এটি একটি কৃষিভিত্তিক এলাকা এবং উর্বর জমির প্রদেশ। ন্যাটো সমর্থিত আফগান আক্রমণ তালিবানদের দেশের কেন্দ্রীয় পরিসর থেকে সরে যেতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল।
তখর প্রদেশ থেকে আফগান পার্লামেন্টের সদস্য সৈয়দ শরাফুদ্দিন আইনি বলেন, তালিবানরা তিন মাসের অগ্রগতির পর বিকেলে শহরটি দখল করতে সক্ষম হয়, এবং প্রদেশের সমস্ত গ্রামাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এলাকার আরেক সাংসদ নাজিফা ইউসুফি বেগ বলেন, গভর্নর, পুলিশ প্রধান, কাউন্সিল সদস্য-সহ সকল প্রাদেশিক কর্মকর্তারা পলাতক। তাদের নিরপত্তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে তাদের এবং অবশ্যই শহরে সামরিক শক্তির প্রয়োজন।
সম্প্রতি, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা তালিবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের খবর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা গত সপ্তাহে স্থানীয় ও বিদেশি মিডিয়ার জন্য আফগান সরকারের প্রেস অপারেশনের প্রধান দাওয়া খান মেনাপালের হত্যাকাণ্ড এবং ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মহম্মদিকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার নিন্দা করেছে।
আরও পড়ুন দখলে একের পর এক শহর, আফগানিস্তানে থাবা চওড়া হচ্ছে তালিবানদের
দেশজুড়ে বিমান হামলা, বোমাবর্ষণ এবং আফগান বাহিনীর অভিযান সঙ্গে তালিবান সন্ত্রাস, দেশের ভৌগলিক চিত্রে যেমন বদল ঘটিয়েছে তেমনই আন্তর্জাতিক স্তরে পরিস্থিতি খুবই জটিল। তালিবানরা রবিবার একটি ইংরেজি ভাষার বিবৃতি জারি করে বলেন যে, সাধারণ বাসিন্দা, সরকারি কর্মচারী এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তাদের থেকে ভয়ের কিছু নেই। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের সহ কোন প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী এবং অন্যান্য সরকারী কর্মচারী, ইসলামিক আমিরাতের মুজাহিদিনদের ভয় পাবেন না বা অন্যত্র পালিয়ে যাবেন না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন