ভারতে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ আয়কর জমা করেন না, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই উক্তির দুদিনের মধ্যেই দেশের আয়কর বিভাগের সামনে ২ লক্ষ কোটি টাকার আয়কর আদায়ের কঠিন লক্ষ্যমাত্রা রাখল কেন্দ্রীয় সরকার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক সূত্র জানিয়েছে, নতুন কর ছাড় প্রকল্প 'বিবাদ সে বিশ্বাস' (Vivad se Vishwas)-এর আওতায় এই অর্থ আদায় করতে হবে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত, যদিও সরকারিভাবে এই প্রকল্পের ঘোষিত সময়সীমা জুন মাস পর্যন্ত।
এই সংক্রান্ত বিল এখনও পাস হয় নি, যদিও বলা হচ্ছে যে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা হয়ে যাবে। তবে দেশজুড়ে আয়কর আধিকারিকদের ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধে লেগে পড়তে বলা হয়েছে, যার ফলে নানা স্তরে দেখা দিচ্ছে হেনস্থার আশঙ্কা, করদাতা এবং কর আদায়কারী, উভয়ের ক্ষেত্রেই। এই আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে কারণ সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (CBDT) কর আদায়ে সাফল্য অথবা অসাফল্যের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে আধিকারিকদের ভবিষ্যৎ পদোন্নতির সম্ভাবনা।
নতুন প্রকল্পের মালিকানা নিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর (PMO), এবং রাজস্ব সচিব অজয় ভূষণ পাণ্ডে ও CBDT-র চেয়ারম্যান পি সি মোদিকে নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ সেল, যা সপ্তাহে একবার বৈঠক করে কতটা কর আদায় হলো, তার তদারকি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জনসুরক্ষা আইনে আটক শাহ ফয়জল
'বিবাদ সে বিশ্বাস' প্রকল্পের ঘোষিত উদ্দেশ্য হলো প্রত্যক্ষ কর (ডিরেক্ট ট্যাক্স) সংক্রান্ত প্রায় ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ছোটবড় মামলার নিষ্পত্তি, যেগুলি জমে আছে নানা ধরনের আদালতে, যেমন কমিশনার (অ্যাপিলস), ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনাল (ITAT), হাইকোর্ট, বা সুপ্রিম কোর্ট।
'বিবাদ সে বিশ্বাস' প্রকল্পের আওতায় কর আদায়ের ঘোষণা গুরুত্ব পায় এই কারণে যে সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই আর্থিক বর্ষে কর আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত, যদিও চলতি বাজেটে ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৩.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়। গত সপ্তাহে CBDT-র চেয়ারম্যান মোদি জানান, এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ কর বাবদ মাত্র ৭.৪০ লক্ষ কোটি টাকা আদায় করেছে আয়কর বিভাগ।
মূল বিলে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে আয়কর নিয়ে কোনোরকম বিতর্কের ক্ষেত্রে করদাতা যদি ৩১ মার্চ, ২০২০-র মধ্যে বিতর্কিত করের ১০০ শতাংশ জমা দেন, তবে সুদ বা জরিমানা, কোনোটাই দিতে হবে না। কিন্তু এই প্রস্তাবে এবার সংশোধন আনতে চলেছে ক্যাবিনেট, যাতে দুটি বিকল্পের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রায় আরও দ্রুত পৌঁছনো যায়।
আরও পড়ুন: প্যান-আধার লিঙ্ক না থাকলেই বিপদ, কাজ করবে না প্যান কার্ড
অতএব যেসব মামলায় আয়কর বিভাগ নিম্নতর আদালতে জিতেছে, এবং করদাতা রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন, সেসব ক্ষেত্রে করদাতাকে বিতর্কিত করের ১০০ শতাংশই দিতে হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে মামলা ঝুলে রয়েছে ITAT, হাইকোর্ট, বা সুপ্রিম কোর্টে, এবং যেখানে আবেদনকারীর ভূমিকায় রয়েছে আয়কর বিভাগ কারণ করদাতা নিম্নতর আদালতে জিতেছেন, সেক্ষেত্রে করদাতা বিতর্কিত করের ৫০ শতাংশ জমা দিলেই চলবে।
এভাবেই নিম্ন আদালতে জিতলেও করদাতাকে 'বিবাদ সে বিশ্বাস' প্রকল্পের আওতায় আনতে চায় আয়কর বিভাগ। করদাতাকে কার্যত বলা হচ্ছে, ৫০ শতাংশ কর দিয়ে মামলার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন তিনি।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব সচিব অজয় পাণ্ডে CBDT-র সদস্য এবং শীর্ষ আয়কর কমিশনারদের বলেন, সারা দেশে যেসব মামলায় করদাতার বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছে আয়কর বিভাগ, সেসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের দ্বারস্থ হয় তারা। ইনকাম ট্যাক্স (অ্যাপিলস)-এর সমস্ত কমিশনারকে বলা হয়েছে যেন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে নির্দেশ জারি করেন তাঁরা, যাতে সংশ্লিষ্ট আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায়। আধিকারিকদেরও বলা হয়েছে যেন কোনোরকম বিবাদের ক্ষেত্রে বিতর্কিত করের সঠিক পরিমাণের পুঙ্খানুপঙ্খ হিসেব করে রাখেন তাঁরা।
CBDT চায় যে আয়কর বিভাগ সমস্ত তথ্য সমেত প্রস্তুত থাকুক, যাতে মার্চের গোড়ায় ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস বিল ২০২০ পাস হওয়া মাত্রই করদাতাদের এই নতুন প্রকল্প সম্পর্কে "প্রত্যয়ী" করে তোলা যায়। আয়কর বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল চিফ কমিশনারদের বলা হয়েছে যেন তাঁরা প্রত্যহ এই কাজ কতটা এগোলো, তার ওপর নজর রাখেন।
কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স, CBDT রাকেশ গুপ্তার সাক্ষর করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিবাদ সে বিশ্বাস প্রকল্পে কোন আধিকারিক কত কাজ করেছেন, বার্ষিক মূল্যনির্ধারণ প্রক্রিয়ার (annual appraisal) সময় তার পর্যালোচনা করবেন তাঁর সংশ্লিষ্ট ওপরওয়ালা, এবং এই পর্যালোচনার ওপরেই নির্ভর করবে তাঁর ভবিষ্যৎ পোস্টিং।