চিকিৎসা যাকে ছাড়া এক মুহুর্ত মানুষের বেচেঁ থাকাই সম্ভব নয়, সেই চিকিৎসাবিদ্যায় যারা নিজেদের প্রাণ ঢেলে দেন তাঁদের পঠন পাঠনেও কিন্তু দিনরাত এক করে দিতে হয়। চিকিৎসাবিদ্যা মানেই প্রাণ বাঁচানোর অঙ্গীকার। ডাক্তার হওয়ার পথ একেবারেই সহজ নয়। মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা মানেই ইংরেজি ভাষার ভিন্ন ধরনের বই এবং প্রতিদিন নতুন কিছুর ভাবনা চিন্তা। আর এবার সেই চিকিৎসাবিদ্যায় সংযোজিত হচ্ছে হিন্দি মাধ্যম।
রবিবার, হিন্দি ভাষায় চিকিৎসাবিদ্যার পাঠ্যবই প্রকাশ করেছেন অমিত শাহ। কিন্তু আদৌ কী সম্ভব? চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমন কিছু শব্দ উচ্চারণ করা হয় যার ব্যাখ্যা বাংলা কিংবা হিন্দিতে সম্ভব কিনা সেই নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে আদৌ চিকিৎসাবিদদের কী মতামত? এত বছরের অভিজ্ঞতা এবং পড়াশোনা বিচার বিবেচনা করে তারা ঠিক কী মনে করছেন।
হিন্দি ভাষায় একটা বই অর্থই তাঁর আগে ডেটা অ্যানালিসিস, ডেটা কারেকশন আরও কত কী। আদৌ সেই ভাষাটা মেডিক্যাল সাইন্সের জন্য উপযুক্ত কিনা সেটাও জানা প্রয়োজন বলেই জানিয়েছেন SSKM হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ তথা প্রফেসর সুদীপ দাস। তার কথায়, "একটা ভাষায় হঠাৎ করে বই লিখে ফেললেই হল না। সেটা যুক্তিযুক্ত কিনা তাঁর গবেষণা করতেই ১০-১৫ বছর লাগতে পারে। তারপর আসে পৃথিবীর জনসংখ্যার কতজন সেই ভাষা জানে। পরীক্ষাটাই ইংরেজিতে হয়। ভারতবর্ষের মধ্যেই কত ভাষা আছে, অন্য শহরে গেলে তাহলে কী হবে"?
আরও পড়ুন < প্রাইমারি TET নিয়ে নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি পর্ষদের, আবেদনকারীদের যোগ্যতায় বিরাট বদল >
মাতৃভাষা কিংবা হিন্দিতে চিকিৎসাবিদ্যার বই কী পরবর্তীতে কোনও সুরাহা করতে পারে? এক্ষেত্রে, চিকিৎসক মানস গুমটার কথায়, "প্রতিদিন মেডিক্যালে কিছু না কিছু যোগ হচ্ছে। এত ইতিহাস এত প্রাকটিকাল কিছুর বই সেসব হিন্দিতে পড়ানো সম্ভব? একজন হিন্দিভাষী ছাত্র যদি পরবর্তীতে এমন কোনও জায়গায় চিকিৎসা করতে যান যেখানে হিন্দি ভাষার চল নেই, সেই বেলায়? স্থানীয় ভাষা জানা ভাল তবে চিকিৎসাবিদ্যা ইংরেজি ছাড়া অসম্ভব! একটা গৈরিকিকরণের পথে হাঁটা ছাড়া এটা কিছুই না"।
আরও পড়ুন < কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া উপাচার্য হচ্ছেন আশিস চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিম রায়ে সরলেন সোনালি চক্রবর্তী >
চিকিৎসাবিদ্যা মানেই মানুষকে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া। তবে, চিকিৎসায় ভাষা কখনই বাঁধা হতে পারে না বলেই মনে করছেন ডায়েট বিশেষজ্ঞ তথা নিউট্রিশনিস্ট-চিকিৎসক সৌভিক চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, "হিন্দিতে পড়ানো মানেই সে প্রেসক্রিপশন দেবে হিন্দিতে সুতরাং হিন্দিভাষী মানুষ ছাড়া তাঁর কাছে কেউ যাবে না। হাড় ভেঙে যাওয়া বলুন বা কোথাও ব্যথা পাওয়া, অপারেশন জনিত সবকিছুই একজনকে ইংরেজিতে জানতে হয়। নইলে ওটি ( OT ) করার সময় হঠাৎ কিছু দরকার পড়লে তাঁর ভাষা অনেকেই বুঝতে পারবে না। সঙ্গে যারা অ্যাসিস্ট করবেন তাঁরা হিন্দি বা স্থানীয় ভাষা নাও জানতে পারেন"।
ডাক্তারিতে হিন্দি ভাষার প্রয়োগে নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দুই ধরনের মন্তব্যই শোনা গেল। এতবছরের ইতিহাস, চিকিৎসা পদ্ধতি স্বল্প সময়ে হিন্দি ভাষায় অনুবাদ করলেও কতটা সুবিধা হবে বলেও বেশিরভাগ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।